মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৯

ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান



অষ্টাদশ শতকে বিজ্ঞান চর্চা বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। এ যুগের বিখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ ক্রিশ্চিয়ান ফ্রেডরিক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১০ এপ্রিল মাঝরাতের পর জার্মানির সেক্সনি রাজ্যের মিসেন নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ১১ টি ভাষায় সুপণ্ডিত, রসায়নবিদ, উদ্ভিদ বিদ্যায় পারদর্শী, সমাজবিজ্ঞানী, মনস্তাত্ত্বিক, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যের রক্ষক। তিনি আধুনিক যুগের চিকিৎসার সংকট নির্ধারণ, সমাধান ও উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক অবদান রাখেন।

হ্যানিম্যান জার্মানীর লিপজিক বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রাদার্স অফ মার্সি হাসপাতাল, আরলাংগেন বিশ্ববিদ্যালয় ও ট্রানসিলভেনিয়ার গভর্নরের পাঠাগারের চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর লেখা যাবতীয় বই পড়েছিলেন। ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি আরলাংগেন  বিশ্ববিদ্যালয় হতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এমডি ডিগ্রী লাভ করেন, অতঃপর ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দ হতে তিনি তার চিকিৎসা জীবন শুরু করেন। তিনি তৎকালীন প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসারে একজন অত্যন্ত জ্ঞানী, বাস্তবধর্মী, প্রগতিশীল ও সফল চিকিৎসক ছিলেন।



বিগত আড়াই হাজার বছরের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা করে তিনি দেখতে পান যে, তখনকার চিকিৎসা বিজ্ঞান নানা অনিয়ম ও সংকটে পরিপূর্ণ ছিল। রোগের কারণ সম্পর্কে তা বিভিন্ন অতিপ্রাকৃতিক, কাল্পনিক, অবাস্তব, অবৈজ্ঞানিক, ক্ষতিকর ও কুসংস্কারচ্ছন্ন ধারণায় পরিপূর্ণ ছিল। এ সময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সহায়ক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোও বিভিন্ন ভুল পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে এগুলো নানা অসদৃশ ও বিসদৃশ চিকিৎসা পদ্ধতির জন্ম দিয়েছে। এ ধরনের চিকিৎসায় কোন কোন সময় সাময়িক উপশম হয়, কিন্তু তা পুনরায় মারাত্মক আকারে ফিরে আসে অথবা আরও ক্ষতিকারক ভিন্ন নামের রোগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এভাবে চিকিৎসার ফলে অনেক অসাধ্য ও দুঃসাধ্য রোগের সৃষ্টি হয় যা সাধারণত আরোগ্য করা যায় না। তিনি বলেন যে, তার সময় পর্যন্ত যত লোক অনাহারে মারা গেছে, এর চেয়ে দশগুণ বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে এমন কুচিকিৎসায়। প্রচলিত চিকিৎসার অনুসারী হিসেবে তিনি নিজের চিকিৎসা জীবনে এই চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যর্থতা ও কুফল বারবার উপলব্ধি করেন।


ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান


১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে ডাঃ উইলিয়াম কেলেন এর লেখা ‘এ ট্রিয়েটিস অন মেটেরিয়া মেডিকা’ বইটি ইংরেজি হতে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেন। উক্ত মেটেরিয়া মেডিকার দ্বিতীয় খন্ড অনুবাদের সময় তিনি দেখতে পান যে, সিনকোনা ম্যালেরিয়া জ্বরের ঔষধ ও এই ঔষধ পাকস্থলীর উপর টনিকের মতো কাজ করে এবং ম্যালেরিয়া ভালো হয়। হ্যানিম্যান এটুকু বর্ণনায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তিনি সিনকোনা গাছের ছালের রস দৈনিক ৮ ড্রাম-ফাইল পরিমাণে নিজে সুস্থ অবস্থায় সেবন করে এর ক্রিয়াক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন তিনি একদিন দেখতে পান যে, সিনকোনা রস সেবনে তার দেহে ম্যালেরিয়া প্রকাশ পেয়েছে। এভাবে বিভিন্ন ভেষজ পদার্থ নিজ দেহে পরীক্ষা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, যে ভেষজ সুস্থ দেহে যে রোগলক্ষণ সৃষ্টি করে, তা যে কোন রোগীর তেমন রোগলক্ষণ আরোগ্য করতে পারে। তিনি এসব ঔষধ দিয়ে বিভিন্ন রোগী আরোগ্য করে হাতেনাতে এর প্রমাণ পান। হ্যানিম্যান তার নব আবিষ্কৃত এ সদৃশ চিকিৎসা পদ্ধতিকে ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে হোমিওপ্যাথি নামে অভিহিত করেন। তিনি ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এলোপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি পরীক্ষামুলকভাবে হোমিওপ্যাথি পদ্ধতিতে চিকিৎসা করেন। ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দ হতে শুধুমাত্র হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা কার্যে নিয়োজিত হন। ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি পশ্চিমা চিকিৎসা পদ্ধতিকে এলোপ্যাথি নামে অভিহিত করেন। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার প্রচলন করে তিনি আধুনিক চিকিৎসায় এক প্রগতিশীল ও যুগান্তকারী ধারা সংযোজন করেন। তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানকে সংস্কারমুক্ত, পরীক্ষা-নিরীক্ষা নির্ভর, বৈজ্ঞানিক, প্রাকৃতিক, নিয়ম নীতি ভিত্তিক ও বিজ্ঞান কলা দর্শন সম্মত আদর্শ চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন।

হ্যানিম্যান চিকিৎসা বিজ্ঞানের উল্লেখিত সংকটময় মুহূর্তে সেই সংকটের সমাধান ও উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখেন।
১৮১০ খ্রিস্টাব্দে হ্যানিম্যান তার কালজয়ী গ্রন্থ "অর্গানন ডার র‌্যাশনেলেন হেইককুন্ডে" রচনা করেন। পরে দ্বিতীয় সংস্করণ থেকে এর পরিবর্তিত নাম দেন "অর্গানন ডার হেইলকন্ড"। এ বইতে তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোচনা করেন। চিকিৎসকের জীবনের উদ্দেশ্য, আদর্শ ও প্রয়োজনীয় গুণাবলী, আদর্শ আরোগ্য, রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্য রক্ষার বিধি-বিধান এতে সংযোজন করেন। এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জ্ঞান প্রদর্শিকা ও সংবিধান স্বরূপ। হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথিতে নির্দোষ প্রথায় ও সফলভাবে রোগ প্রতিষেধক ব্যবস্থার প্রচলন করেন। তিনি ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে "আরক্তজ্বর" এ "বেলেডোনা" এবং ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে "টাইপাস" ও "হসপিটাল জ্বর" কে প্রতিষেধক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করেন।

জনস্বাস্থ্যের বৃহত্তর সেবার লক্ষ্যে তিনি জার্মানিতে "লিপজিক হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল ও শিক্ষা কেন্দ্র" প্রতিষ্ঠা করেন। তার ব্যক্তিগত সাহচর্য পত্র-পত্রিকা, বই ও সভা সম্মেলনে হোমিওপ্যাথি শিক্ষা দিতেন। তিনি লিপজিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮১২ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৮২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার হোমিওপ্যাথি শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। এমনকি বিশ্ব হোমিওপ্যাথির সংগঠক হিসেবে এর প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখেন।



হ্যানিম্যান ছিলেন আধুনিক যুগের একজন আদর্শ চিকিৎসক। তিনি চিকিৎসা জগতে আদর্শ আরোগ্যকারী, পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াহীন ও স্বল্প খরচের সহজলভ্য চিকিৎসার প্রবর্তক। ঔষধ, রোগ ও ঔষধের কার্যকারিতা নিয়ে তার আবিষ্কার সমূহ আধুনিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে, কিংবা বিজ্ঞান এখনো এর অনেক কিছু আবিষ্কার ও প্রমাণ করতে পারেনি। হোমিওপ্যাথির কোন ঔষধ আজ পর্যন্ত অকার্যকর ও বাতিল হয়নি, তাই হ্যানিম্যান তার মৃত্যুর বেশকিছু আগে যথার্থই বলেছিলেন "আমি বৃথা জন্ম ধারণ করিনি"।


হ্যানিম্যান শেষ জীবনে পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। যার ফলে জার্মানীতে তার জীবন অনিরাপদ হয়ে উঠে। ১৮৩৫ সালের জুন মাসে নিরাপত্তা ও শান্তির সন্ধানে পৈত্রিক দেশ জার্মানি ত্যাগ করেন, আর কখনো তিনি বা তার স্ত্রী ফ্রান্স থেকে জার্মানিতে ফিরে যাননি। অবশেষে মহাত্মা হ্যানিম্যান ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২জুলাই মৃত্যুবরণ করেন এবং তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী প্যারিসের অখ্যাত মাউন্ট মারট্রির গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৯

বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

বিশ্ব মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় হতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। তথাপিও আমাদের দেশে সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম সফল না হওয়ার পেছনে যে মূল সমস্যাটি রয়েছে বলে আমরা মনে করি, তা হল প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে w.h.o. স্বীকৃত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়ন ও সমন্বয়ের অভাব। কেবলমাত্র এলোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি বা এ পদ্ধতির চিকিৎসকদের দিয়েই বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল জনবহুল দেশে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে হলে প্রয়োজন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃত নিরাপদ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি স্বল্পমূল্যের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যাপক সহযোগিতা বা অংশগ্রহণ। 

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থা এ উপমহাদেশে আবির্ভূত হয় ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে ডাঃ  জন  মার্টিন  হোনিগবার্গারের আগমনে। তিনি তৎকালীন ভারতবর্ষের পাঞ্জাবের শাসনকর্তা রণজিৎ সিংহের ভোকাল কর্ডের প্যারালাইসিস ও  ইডেমা চিকিৎসা করেন। ডাঃ হোনিগবার্গার পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে কিছুকাল চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। সেই থেকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে আমাদের দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। 

আজ হোমিওপ্যাথি দেশের সাধারণ মানুষের নিদানকালের বন্ধু। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জটিল ও ক্রনিক রোগে এ চিকিৎসা পদ্ধতির দ্বারা দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে আসছে। নিরাপদ, সুলভ, স্বল্পমূল্য, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন ও গ্রহণযোগ্য কার্যকারিতার কারণে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞান আমাদের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশসহ পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের স্বাস্থ্য সেবায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। ক্রমান্বয়ে সাধারণ মানুষসহ প্রচলিত ও এলোপ্যাথিক চিকিৎসা ধারার চিকিৎসকগণও এ চিকিৎসা পেশার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। উপমহাদেশের বাহিরেও বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত এর বিস্তৃতি লাভ করেছে। 

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়, বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শিক্ষা কোর্স দুটি- ১। ব্যাচেলর অফ হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এন্ড সার্জারি (বিএইচএমএস) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, কোর্সের মেয়াদ পাঁচ বছর একাডেমিক শিক্ষা এবং ১ বছর ইন্টার্ণশিপ। ২। ডিপ্লোমা ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এন্ড সার্জারি (ডিএইচএমএস) বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড অধিভুক্ত এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, কোর্সের মেয়াদ ৪ বছর একাডেমিক শিক্ষা এবং ছয় মাস ইন্টার্ণশিপ। বিএইচএমএস চালু রয়েছে সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ঢাকা এবং বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ঢাকাতে। ডিএইচএমএস কোর্স চালু রয়েছে ৬১ টি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে। দেশের প্রায় প্রতিটি বিভাগের বিভিন্ন জেলায় কলেজগুলো প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে বিএইচএমএস রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার জন, রেজিস্ট্রেশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ডিএইচএমএস রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার জন, রেজিস্ট্রেশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা হাসপাতাল নিয়োগপ্রাপ্ত হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল অফিসারের সংখ্যা ১১২ জন। ঢাকার মিরপুর-১৪ তে অবস্থিত সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে রোগীর বেড সংখ্যা ১০০ টি। সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। ঢাকার বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। ঢাকার সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে সরকারি পর্যায়ে দেশের একমাত্র হোমিওপ্যাথিক রিসার্চ সেন্টার ইউনিট অবস্থিত। বাংলাদেশে উৎপাদিত হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সংখ্যা প্রায় ৫০ টি। বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড পরিচালিত দাতব্য মেডিকেল সেন্টারের সংখ্যা বর্তমানে ৬ টি। 

তাছাড়াও ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক দেশের বিভিন্ন জেলায় হোমিওপ্যাথিক দাতব্য চিকিৎসা কার্যক্রম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক একটি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিচালনাসহ কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দাতব্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাসেবা  কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠান আহসানিয়া মিশন ও হোমিওপ্যাথিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশসহ অনেক প্রতিষ্ঠান হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে যার মাধ্যমে দেশের জনগণ স্বল্পমূল্যে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে।

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে হোমিওপ্যাথির প্রয়োজনও বটে। সর্বোপরি এদেশের মানুষও হোমিওপ্যাথিকে রোগে-শোকে আপন করে নিয়েছে।এধারা ভবিষ্যতে আরো বেগবান হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

হোমিওপ্যাথি কি?

হোমিওপ্যাথি হচ্ছে একটি আরোগ্য কলা, যা প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারে রোগীকে সর্বোত্তম উপায়ে নিরাময়তা দান করে। এটিই হলো সর্বাপেক্ষা কষ্টহীন উপায়ে ও বিনা ক্ষতিতে স্থায়ীভাবে রোগ নিরাময় পদ্ধতি। একজন এলোপ্যাথিক চিকিৎসক ও ঔষধ গবেষক ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এক্ষেত্রে হ্যানিম্যানের বৈজ্ঞানিক নীতি হলো "একটি দুর্বলতর ক্রিয়াশীল শক্তি সদৃশ বলোবতর ক্রিয়াশীল শক্তি দ্বারা স্থায়ীভাবে দূরীভূত হয়"।

হোমিওপ্যাথি শব্দটির অর্থ "সদৃশবিধান সম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি"। এটি ল্যাটিন শব্দ Homoeo এবং Pathy এ দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। Homoeo অর্থ সদৃশ বিধান এবং Pathy অর্থ রোগ অর্থাৎ হোমিওপ্যাথি শব্দের অর্থ হলো সদৃশ্য বিধানের রোগ নিরাময় পদ্ধতি। 



হোমিওপ্যাথির মূলনীতির নামই হল "সিমিলিয়া সিমিলিবাস কিউরেনচার" অর্থাৎ সদৃশই সদৃশ কে বিদূরিত করে আরোগ্য দান করে। ডাঃ বোরিক বলেন, "সদৃশ লক্ষণ ভিত্তিক আরোগ্য পদ্ধতিকে হোমিওপ্যাথি বলে"। ডাঃ স্টুয়ার্ট ক্লোজ বলেন, "আরোগ্যকারী বিজ্ঞান ও কলাকে হোমিওপ্যাথি বলে"। 



অর্থাৎ রোগীর রোগ লক্ষণের সদৃশ লক্ষণ সৃষ্টিকারী ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয় যে পদ্ধতিতে তাকেই হোমিওপ্যাথি বলে। রোগীর জন্য এই পদ্ধতিটিই সর্বাপেক্ষা কার্যকর ও নিরাপদ।