বাংলাদেশের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
বাংলাদেশের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৯

বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

বিশ্ব মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় হতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। তথাপিও আমাদের দেশে সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম সফল না হওয়ার পেছনে যে মূল সমস্যাটি রয়েছে বলে আমরা মনে করি, তা হল প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে w.h.o. স্বীকৃত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়ন ও সমন্বয়ের অভাব। কেবলমাত্র এলোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি বা এ পদ্ধতির চিকিৎসকদের দিয়েই বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল জনবহুল দেশে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে হলে প্রয়োজন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃত নিরাপদ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি স্বল্পমূল্যের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যাপক সহযোগিতা বা অংশগ্রহণ। 

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থা এ উপমহাদেশে আবির্ভূত হয় ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে ডাঃ  জন  মার্টিন  হোনিগবার্গারের আগমনে। তিনি তৎকালীন ভারতবর্ষের পাঞ্জাবের শাসনকর্তা রণজিৎ সিংহের ভোকাল কর্ডের প্যারালাইসিস ও  ইডেমা চিকিৎসা করেন। ডাঃ হোনিগবার্গার পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে কিছুকাল চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। সেই থেকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে আমাদের দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। 

আজ হোমিওপ্যাথি দেশের সাধারণ মানুষের নিদানকালের বন্ধু। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জটিল ও ক্রনিক রোগে এ চিকিৎসা পদ্ধতির দ্বারা দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে আসছে। নিরাপদ, সুলভ, স্বল্পমূল্য, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন ও গ্রহণযোগ্য কার্যকারিতার কারণে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞান আমাদের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশসহ পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের স্বাস্থ্য সেবায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। ক্রমান্বয়ে সাধারণ মানুষসহ প্রচলিত ও এলোপ্যাথিক চিকিৎসা ধারার চিকিৎসকগণও এ চিকিৎসা পেশার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। উপমহাদেশের বাহিরেও বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত এর বিস্তৃতি লাভ করেছে। 

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়, বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শিক্ষা কোর্স দুটি- ১। ব্যাচেলর অফ হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এন্ড সার্জারি (বিএইচএমএস) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, কোর্সের মেয়াদ পাঁচ বছর একাডেমিক শিক্ষা এবং ১ বছর ইন্টার্ণশিপ। ২। ডিপ্লোমা ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এন্ড সার্জারি (ডিএইচএমএস) বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড অধিভুক্ত এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, কোর্সের মেয়াদ ৪ বছর একাডেমিক শিক্ষা এবং ছয় মাস ইন্টার্ণশিপ। বিএইচএমএস চালু রয়েছে সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ঢাকা এবং বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ঢাকাতে। ডিএইচএমএস কোর্স চালু রয়েছে ৬১ টি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে। দেশের প্রায় প্রতিটি বিভাগের বিভিন্ন জেলায় কলেজগুলো প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে বিএইচএমএস রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার জন, রেজিস্ট্রেশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ডিএইচএমএস রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার জন, রেজিস্ট্রেশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা হাসপাতাল নিয়োগপ্রাপ্ত হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল অফিসারের সংখ্যা ১১২ জন। ঢাকার মিরপুর-১৪ তে অবস্থিত সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে রোগীর বেড সংখ্যা ১০০ টি। সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। ঢাকার বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। ঢাকার সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে সরকারি পর্যায়ে দেশের একমাত্র হোমিওপ্যাথিক রিসার্চ সেন্টার ইউনিট অবস্থিত। বাংলাদেশে উৎপাদিত হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সংখ্যা প্রায় ৫০ টি। বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড পরিচালিত দাতব্য মেডিকেল সেন্টারের সংখ্যা বর্তমানে ৬ টি। 

তাছাড়াও ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক দেশের বিভিন্ন জেলায় হোমিওপ্যাথিক দাতব্য চিকিৎসা কার্যক্রম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক একটি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিচালনাসহ কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দাতব্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাসেবা  কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠান আহসানিয়া মিশন ও হোমিওপ্যাথিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশসহ অনেক প্রতিষ্ঠান হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে যার মাধ্যমে দেশের জনগণ স্বল্পমূল্যে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে।

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে হোমিওপ্যাথির প্রয়োজনও বটে। সর্বোপরি এদেশের মানুষও হোমিওপ্যাথিকে রোগে-শোকে আপন করে নিয়েছে।এধারা ভবিষ্যতে আরো বেগবান হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।