শনিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২২

দ্রুত বীর্যপাত কি? কেন হয় দ্রুত বীর্যপাত? দ্রুত বীর্যপাতরোধে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ সমূহ।

দ্রুত বীর্যপাত বলতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রি-ম্যাচিউর ইজাকুলেশনকে বুঝানো হয়ে থাকে। যদি নিয়মিত নারী-পুরুষের মধ্যে  ইচ্ছার চেয়ে দ্রুত বীর্যপাত হয়, অর্থাৎ যৌন সঙ্গম শুরু করার  আগেই কিংবা যৌন সঙ্গম শুরুর একটু পরেই  যদি  বীর্যপাত হয়ে  যায় তাহলে যে সমস্যাটি হয় তার নাম দ্রুত বীর্যপাত বা প্রি-ম্যাচিউর ইজাকুলেশন। 

প্রি-ম্যাচিউর ইজাকুলেশন একটি সাধারণ যৌন  সমস্যা, প্রায় মানুষের মাঝেই এ সমস্যাটি খুঁজে পাওয়া যায়।  তবে  সঠিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার  মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

উপসর্গঃ পুরুষের বীর্যপাত হতে কতটা সময় নেবে সে ব্যাপারে চিকিৎসা বিজ্ঞানে আদর্শ মাপকাঠি বলতে কিছু নেই। দ্রুত বীর্যপাতের প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে নারী-পুরুষ উভয়ের চরম পুলক লাভের আগেই পুরুষটির বীর্যপাত হয়ে যাওয়া। এ সমস্যা সব ধরনের যৌনতার ক্ষেত্রেই হতে পারে। যেমন হস্তমৈথুন কিংবা যৌন মিলনের সময়।


কারণঃ ঠিক কি কারণে দ্রুত বীর্যপাত হচ্ছে তা খুঁজে বের করতে বিশেষজ্ঞগণ এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। একসময় ধারণা করা হতো, এটি সম্পূর্ন মানসিক ব্যাপার। কিন্তু বর্তমানে জানা যায় যে, দ্রুত বীর্যপাত হওয়া একটি জটিল বিষয় এবং যার সংগে মানসিক এবং জৈবিক দুটোরই সম্পর্ক রয়েছে।

মানসিক কারণঃ কিছু চিকিৎসক মনে করেন যে, প্রথম বয়সে যৌন অভিজ্ঞতা ঘটলে তা এমন একটি অবস্থায় পৌঁছে যে, পরবর্তী যৌন জীবনে সেটি পরিবর্তন করা কঠিন হতে পারে। যেমন-

১। লোকজনের দৃষ্টিকে এড়ানোর জন্য তড়িঘড়ি করে চরম পুলক লাভ করার চেষ্টা।

২। অপরাধবোধ, যার কারণে যৌনক্রিয়ার সময় হঠাৎ করেই বীর্যপাত ঘটে যাওয়া। অন্য আরও কিছু বিষয় দ্রুত বীর্যপাত ঘটাতে পারে। এসবের মধ্যে আছে-

পুরুষাঙ্গের শিথিলতাঃ যেসব পুরুষ যৌনমিলনের সময় তাদের লিঙ্গের উত্থান ঠিকমত হবে কিনা কিংবা কতক্ষণ লিঙ্গ উত্থিত অবস্থায় থাকবে এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলেও দ্রুত বীর্যপাত ঘটে।

দুশ্চিন্তাঃ অনেক পুরুষের দ্রুত বীর্যপাতের একটি প্রধান কারণ দুশ্চিন্তা। যৌনকর্ম ঠিকমত সম্পন্ন করতে পারবেন কিনা তা নিয়েই যত দুশ্চিন্তা। আবার অন্য কারণেও হতে পারে। দ্রুত বীর্যপাতের আরেকটি প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত উত্তেজনা।

জৈবিক কারণঃ বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, কিছু সংখ্যক জৈবিক বা শারীরিক কারণে দ্রুত বীর্যপাত ঘটতে পারে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে-

১। হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রা।

২। মস্তিষ্কের রাসায়নিক উপাদান বা নিউরোট্রান্সমিটারের অস্বাভাবিক মাত্রা।

৩। বীর্যস্খলনে অস্বাভাবিক ক্রিয়া।

৪। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা।

৫। প্রোস্টেট অথবা মূত্রনালীর প্রদাহ ও সংক্রমণ।

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ঃ দ্রুত বীর্যপাতে ঝুঁকি বাড়াতে পারে যেসব বিষয়-

পুরুষাঙ্গের শিথিলতাঃ লিঙ্গ বা পেনিস ঠিকমত উত্থিত না হওয়া বা মাঝে মাঝে উত্থিত হওয়া অথবা উত্থিত হয় কিন্তু বেশিক্ষণ হট অবস্থায় না থাকা। এটি দ্রুত বীর্যপাত ঘটানোর ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে পারে। যৌন সঙ্গমের সময় লিঙ্গের উত্থান বা পেনিসের হট অবস্থা বেশিক্ষণ থাকবে না এমন ভয়ও দ্রুত বীর্যপাত ঘটাতে পারে।

স্বাস্থ্যগত সমস্যাঃ যদি এমন স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে যার কারণে যৌন মিলনের সময় উদ্বেগ অনুভব করে যথা-হৃদরোগ থাকে, এতেও দ্রুত বীর্যপাতের ঘটনা ঘটতে পারে।

মানসিক চাপঃ আবেগজনিত কারণ কিংবা মানসিক চাপ দ্রুত বীর্যপাতের ব্যাপারে ভূমিকা রাখে।

জটিলতাঃ যদিও দ্রুত বীর্যপাত আপনার মারাত্মক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়ায় না কিন্তু এটি ব্যক্তিগত জীবনে ধ্বস নামাতে পারে। যেমন-সম্পর্কে টানাপোড়েন। দ্রুত বীর্যপাতের সাধারণ জটিলতা হলো যৌন সঙ্গিনীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি।

প্রতিরোধঃ দ্রুত বীর্যপাতের কারণে যৌন সঙ্গিনীর সঙ্গে ঠিকমত যোগাযোগ বন্ধন গড়ে উঠতে পারে না। চরম পুলকে পৌঁছতে পুরুষের তুলনায় নারীর দীর্ঘ উদ্দীপনার প্রয়োজন হয় আর এই পার্থক্য একটি দম্পত্তির মধ্যে যৌন অসন্তষ্টি ঘটাতে পারে। অনেক পুরুষ যৌন মিলনের সময় চাপ অনুভব করেন বলে দ্রুত বীর্যপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

নারী ও পুরুষ একে অপরকে বুঝতে পারলে দুজনের জন্যই যৌন সুখ লাভ করা সহজ হয়। এতেকরে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তাও দূর হয়। যদি সঙ্গিনীর কাছ থেকে যৌন সুখ লাভ না করেন তাহলে তার সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করতে হবে। দুজনের মধ্যে সমস্যাটি কোথায় তা খুঁজে বের করতে হবে এবং প্রয়োজনে একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকে+র সাহায্য নিতে হবে। এক্ষেত্রে সব লজ্জা ও জড়তা ঝেড়ে ফেলে খোলা মনে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। এ সমস্যা খুবই সাধারণ এবং এর নির্ভরযোগ্য চিকিৎসাও রয়েছে।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ এ রোগের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিতে এগনাস কাস্ট, টারনেরা, লাইকোপোডিয়াম, ট্রিবোলাস, ডামিয়ানা, টেস্টিস, এসিড ফস, নুফার লুটিয়াসহ কয়েকটি ঔষধ রয়েছে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় একেক রোগীর একেক ধরনের ঔষধ প্রয়োগের প্রয়োজন হতে পারে। রোগী, রোগের কারণ ও লক্ষণ এবং মাত্রাভেদে এসব ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। তাই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ঔষধ সেবন করা উচিত নয়।

দ্রুত বীর্যপাত প্রতিরোধকারী ঔষধ সমূহঃ 

Caladium Seg (ক্যালাডিয়াম সেগ)- বহুদিন যাবৎ স্বপ্নদোষ হতে হতে লিঙ্গ বা পেনিস শিথিল হয়ে গেছে, স্ত্রী সহবাসের বা সেক্স করার ইচ্ছা অত্যান্ত প্রবল কিন্তু ক্ষমতাহীন। সহবাসকালে বা সেক্স করার সময়ে লিঙ্গ শক্ত বা হট হয় না, যদিও সামান্য রতিক্রিয়াতেই বীর্যপাত হয়ে যায়।

Conium (কোনিয়াম)- স্ত্রী সহবাসের ইচ্ছা অত্যাধিক কিন্তু অক্ষম, সহবাসকালে সোহাগ আলিঙ্গনের সময়ও লিঙ্গ শিথিল হয়ে যায়।

Lycopodium (লাইকোপোডিয়াম)- হস্তমৈথুন বা মাস্টারব্রেট, স্বপ্নদোষ, অথবা অত্যাধিক স্ত্রী সহবাসের কারণে ধ্বজভঙ্গ, স্ত্রীকে সোহাগ-আলিঙ্গন করলেও লিঙ্গ শক্ত বা হট হয় না।

Selenium (সেলেনিয়াম)-শুক্র তারল্য (বীর্য পাতলা) রোধে কার্যকর।

Agnus Castus (এগনাস কাস্ট)- অবৈধভাবে বা অপব্যবহারের মাধ্যমে বীর্যক্ষয়জনিত কারণে যারা ধ্বজভঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।

Anacardium (এনাকার্ডিয়াম)- স্মরণ শক্তিহীন রোগীদের প্রস্রাবের আগে বা পরে ধাতুপাত হয়ে ধ্বজভঙ্গ হলে।

Acid Phos (এসিড ফস)- স্ত্রী সহবাস জনিত মাথা ঘুরা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, লিঙ্গ শিথিল, অতি শীঘ্রই বীর্যপাত।

Carbonium Sulph (কার্বনিয়াম সালফ)- অজান্তে অথবা অনিচ্ছা সত্ত্বেও বীর্যপাত এবং স্ত্রী সহবাসের ইচ্ছা হয় না।

Salix Nigra (স্যালিক্স নায়াগ্রা)- স্ত্রী সহবাসের ইচ্ছা প্রবল কিন্তু সহবাসের ক্ষমতাহীন।

Titanium (টিটেনিয়াম)- সঙ্গমে অতি শীঘ্রই বীর্যপাত ও বীর্য পাতলা।

Nuphar Lut (নুফার লুটিয়া)- কাম উত্তেজনার হট কথা-বার্তায় কিংবা উত্তেজনায় অসাড়ে বীর্যপাত।

Turnera (টারনেরা)- শুক্রবর্ধক ঔষধ।

Avana Sat (এভেনা স্যাটাইভা)- হস্তমৈথুন বা মাস্টারব্রেট, স্বপ্নদোষ বা অতিরিক্ত স্ত্রী সহবাসজনিত শারীরিক দুর্বলতার জন্য উপকারী।

Medorrhinum (মেডোরিনাম)- গণরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ধ্বজভঙ্গ হলে প্রথমে এই ঔষধটি সেবন করে পরে লক্ষণ অনুযায়ী অন্য ঔষধ সেবন করতে হয়।

Phosphorus (ফসফরাস)- সুন্দর লম্বা ছিপছিপে গড়ন, চালাক, সামান্য কারণে মন খারাপ হয়ে যায়, হাঁটার সময় সামান্য নুয়ে চলে এই ধাতুর রোগীর হস্তমৈথুন, স্বপ্নদোষ কিংবা অতিরিক্ত স্ত্রী সহবাসে বা অসাড়ে শুক্রপাত ইত্যাদি কারণে ধ্বজভঙ্গ হলে ফসফরাসে উপকৃত হতে পারে।

    দ্রুতবীর্যপাত সমস্যায় উপরে আলোচিত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ গুলো লক্ষণ ভিত্তিক পরিমিত মাত্রায় সেবনে  স্বাভাবিক যৌন জীবন ফিরিয়ে দিতে দারুন কার্যকর।