রবিবার, ১৬ জুন, ২০১৯

লিউকোরিয়া বা সাদাস্রাব রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা


লিউকোরিয়া বা সাদা স্রাব মহিলাদের একটি কমন রোগ। এটি প্রায় মহিলার মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। এটি সাদা স্রাব, শ্বেত স্রাব, শ্বেতপ্রদর বা লিউকোরিয়া নামে পরিচিত। বিভিন্ন কারণে মহিলাদের যোনিপথে সাদা অথবা হলুদ রঙের শ্লেষ্মা জাতীয় তরল পদার্থ নির্গত হয় তাকে সাদাস্রাব বা লিউকোরিয়া বলা হয়। সাদাস্রাব বা শ্বেতস্রাব হওয়ার প্রধান কারণ হলো হরমোনের ভারসাম্যহীনতা অর্থাৎ মহিলাদের শরীরে যে ইস্ট্রোজেন হরমোন নির্গত হয় তার ভারসাম্যহীনতার কারণে সাদাস্রাব দেখা দেয়। দ্বিতীয় কারণ হলো যোনিপথের ইনফেকশন তাই ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, পরিষ্কার প্যাড- ন্যাপকিন ব্যবহার করতে হবে। তৃতীয় কারণ হলো খাবার দোষ- যদি মহিলারা খুব অল্প পরিমাণ খাবার খায় তাহলে দুর্বলতাবশত সাদাস্রাব হতে পারে অথবা তৈলাক্ত খাবার, মসলাদার খাবার যদি বেশি খায় বা পুষ্টিকর খাবার কম খায় এক্ষেত্রেও সাদাস্রাব দেখা দিতে পারে। চতুর্থ কারণ হলো ঠান্ডা লাগা- আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণেও সাদাস্রাব হতে পারে, এছাড়াও মহিলারা যদি অত্যধিক পরিশ্রম করে, অধিক সহবাস করে, ধূমপান বা মদ্যপান করে তাহলেও সাদাস্রাব হতে পারে।

সাদাস্রাব বা লিউকোরিয়া

লক্ষণঃ মহিলাদের সাদাস্রাব এর প্রধান লক্ষণ হলো সাদা বা হলুদ বা ডিমের সাদা অংশের ন্যায় শ্লেষ্মা জাতীয় জলীয় পদার্থ যোনিপথ দিয়ে নির্গত হয়। এতে কোন কোন সময় দুর্গন্ধ থাকে, জ্বালা থাকে এবং চুলকানি থাকে।তলপেটে ব্যথা থাকে, মেজাজ খিটখিটে থাকে, রোগা হয়ে যায়, হজমের গন্ডগোল থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। সাদাস্রাব যদি দীর্ঘদিন থাকে তাহলে যোনীতে ক্ষত বা ভ্যাজাইনাল আলসার দেখা দেয় এমনকি এটি যদি ঠিকমতো চিকিৎসা করা না হয় তাহলে যোনীতে ক্যান্সার পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।

সাদাস্রাব এর কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক কম্বিনেশন ঔষধঃ সাদাস্রাবের একটি কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক কম্বিনেশন ঔষধ তৈরি করতে যে ২ টি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দরকার তা হল- ১। অশোকা মাদার টিংচারঃ এটিকে মহিলাদের জরায়ুর টনিক বলা হয়। মহিলাদের জরায়ুর দুর্বলতা, ওভারির দুর্বলতা দূর করতে অশোকা মাদার টিংচার খুব সাহায্য করে। এছাড়া এটি সাদাস্রাব দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ২। হেলেনিয়াস ডি মাদার টিংচারঃ এটি মহিলাদের জরায়ুর দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে। মহিলাদের মাসিকের যেসব সমস্যা আছে তা দূর করতে ও সাদাস্রাব দূর করতে সাহায্য করে। এ দুটি ঔষধ ১৫ এমএল করে নিয়ে দশ বার ভালভাবে ঝাঁকিয়ে ৩০ এমএল মিক্সার তৈরি করে আধা কাপ পানিতে ১৫ ফোঁটা করে দিয়ে দিনে তিনবার খাবার খাওয়ার আধা ঘন্টা পর খেতে হবে। সাদাস্রাব এর আর একটি কার্যকরী ঔষধ হলো ওভা টেস্টা ৩এক্সঃ এটি সাদাস্রাব নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এটি মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণ এর ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনতে সাহায্য করে। ওভা টেস্টা ৩এক্স। এটি দুইটি করে ট্যাবলেট দিনে তিনবার খাবার আধা ঘণ্টা আগে চিবিয়ে খেয়ে সামান্য পানি খেতে হবে। 

সাদাস্রাব দূর করতে একটি চমৎকার বায়োকম্বিনেশন ঔষধ হলো বিসি-১৩। এতে যেসব বায়োকেমিক ঔষধ মেশানো রয়েছে তা হল- ১। ক্যালসিয়াম ফসফোরিকামঃ যা সাদাস্রাব দূর করতে ও শরীরের দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে। ২। কেলি ফসঃ নার্ভের দুর্বলতা ও হরমোনের ইমব্যালেন্স দূর করতে সাহায্য করে। ৩।কেলি সালফঃ এটি সাদাস্রাব এর জ্বালা ও চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে। ৪। নেট্রাম মিউরঃ মহিলাদের দুর্বলতা দূর করতে ও সাদাস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

এ সমস্ত ঔষধ দিয়ে বিসি-১৩ বায়োকম্বিনেশন ওষুধটি তৈরি করা হয়েছে। এটি ৪টি করে ট্যাবলেট দিনে তিনবার খাবার আধা ঘন্টা আগে চিবিয়ে খেয়ে হালকা গরম পানি খেতে হবে। আর ওভা টেস্টা ৩এক্স ট্যাবলেট টি খেলে তার ১০ মিনিট পূর্বে খেতে হবে।

এই ঔষধ গুলি যদি ঠিকমতো সেবন করা হয় তাহলে যাদের সাদা স্রাব নতুন শুরু হয়েছে বা অল্প পরিমাণে সাদাস্রাব হয় তাদের এক সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে আর যাদের রোগ অনেক দিনের পুরাতন বা অনেক বেশি পরিমাণে সাদাস্রাব হয় তাদের তিন মাস পর্যন্ত সেবনে সাদাস্রাব দূর হবে আশা করা যায়।