আমাদের চারপাশে সব সময় কোন না কোন অসুখ বিসুখ লেগেই থাকে, যেমন- কারো বাড়ির কোন সদস্যের হঠাৎ পুড়ে যাওয়া, আঘাত লাগা, কারো জ্বর হওয়া, কারো সর্দি হওয়া, কারো পেটের পীড়া হওয়া ইত্যাদি। এই সমস্ত অসুখ বিসুখ থেকে রেহাই পেতে প্রত্যেকের বাড়িতেই হোমিওপ্যাথিক প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ রাখা প্রয়োজন। প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ সাতটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ বাড়িতে রাখলে আমাদের জটিল কোনো সমস্যা ব্যতীত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না।
Homeopathic First Aid |
সাতটি কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক ঔষধঃ
১। একোনাইট ৩০: একোনাইট ৩০ ঔষধ টি বাড়িতে অবশ্যই রাখা উচিত। এই ঔষধটি ঠান্ডা লেগে যদি কোন রোগ হয়, যেমন- সর্দি, কাশি, জ্বর এই ধরনের রোগে চমৎকার ফলপ্রদ। এই ঔষধটি আরো যে সমস্ত রোগের কার্যকরী তা হচ্ছে হঠাৎ যদি ভয় পেয়ে কোন রোগ বা হঠাৎ কোনো দুর্ঘটনায় মৃত্যু ভয় এসে যায়, ঠোঁট সাদা হয়ে যায়, চোখ বুঝতে থাকে সে ক্ষেত্রেও একোনাইট ৩০ ভালো কাজ করে। হঠাৎ মাথা ব্যাথা, হাত-পা ব্যথা করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী। দুই ঘন্টা পর পর দুই ফোঁটা করে সেবন করতে হবে।
২। আর্নিকা ৩০: আমাদের বাড়িতে দ্বিতীয় যে ওষুধটি রাখা দরকার তা হলো আর্নিকা ৩০। কোন রকমভাবে কেউ আঘাত পেলে, পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলে, আমাদের বাচ্চারা হঠাৎ পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলে সে ক্ষেত্রে আর্নিকা ৩০ ভালো কাজ করে। অনেক সময় চোট লাগার ফলে রক্ত জমে যায়, কালশিরা পড়ে যায় সে ক্ষেত্রে বড়রা ২ ফোঁটা, শিশুরা এক ফোঁটা জিভে দিয়ে সেবন করলে ব্যথা সেরে যায়। এছাড়া কারো মাজা ব্যথা, কারো হাঁটুর ব্যথায় আর্নিকা ৩০ দুই ফোঁটা করে দিনে চারবার খেলে ব্যথা সেরে যাবে। চুল পড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত ভালো কাজ করে। যে কোন রকম চোট বা আঘাত লাগলে আর্নিকা ৩০ সেবনে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৩। নাক্স ভমিকা ৩০: এই ঔষধটি পেটের গন্ডগোল এর ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। সামগ্রিক ভাবে বলতে গেলে নাক্স ভমিকা ৩০ আমাদের পেটের যাবতীয় গন্ডগোল, যেমন-গ্যাস, বদহজম, বুক জ্বালা, মুখ টক হয়ে যাওয়া, মুখ তিতা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। এর সাথে সাথে যদি কারো ঘুম কম হয় তাহলে নাক্স ভমিকা ৩০ দিনে তিনবার দুই ফোঁটা করে সেবন করলে ঘুম ঠিকঠাক মত হবে। আবার অনিদ্রার কারণে বা রাত জাগার কারণে বা অত্যধিক পরিশ্রমের কারনে যদি কোন রোগ হয় তাহলে নাক্স ভমিকা ৩০ দিনে চারবার দুই ফোঁটা করে নিলে ভালো কাজ করে। পেটের গন্ডগোল এর কারনে যদি বমি হয় সে ক্ষেত্রে এটি চমৎকার কাজ করে। তাছাড়া বাড়িতে যদি অন্য কোন ঔষধ না থাকে যদি নাক্স ভমিকা ৩০ থাকে তাহলে সর্দি, কাশি, জ্বর বা অন্য যে কোন রোগের ক্ষেত্রে দুই ফোঁটা করে দুই ঘন্টা পর পর সেবন করলে আরাম হয়ে যেতে পারে।
৪। ব্রায়োনিয়া ৩০: ৪র্থত যে ঔষধটি আমাদের বাড়িতে রাখা প্রয়োজন সেটি হল ব্রায়োনিয়া ৩০। এটিকে হোমিওপ্যাথির প্যারাসিটামল বলা হয়। যে কোন জ্বরের ক্ষেত্রে বা মাথা ব্যথা, সর্দি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। এছাড়া ব্রায়োনিয়া ৩০ গ্যাস, কোষ্ঠ্য কাঠিন্যের ক্ষেত্রেও ভালো কাজ করে। দুই ঘণ্টা পরপর দুই ফোঁটা করে সেবন করতে হবে।
৫। আর্সেনিক ৩০: যদি বিষাক্ত খাবার এর ফলে বা ফুড পয়জনিং এর কারণে যদি কোন রোগ হয়, বমি হয়, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হয়, পেটে জ্বালা হয় এক্ষেত্রে আর্সেনিক ৩০ দুই ঘন্টা পর পর দুই ফোঁটা করে সেবন করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। অনেক সময় দেখা যায় বিষাক্ত পানি পানের কারণে বিভিন্ন রোগ হয়, সর্দি-কাশি বা চর্মরোগ হয় এক্ষেত্রেও এটি ভালো ফলপ্রদ। বিষাক্ত খাবার খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হলেও এ ঔষধটি ভালো কাজ করে।
৬। রাসটক্স ৩০: যদি বর্ষাকালীন কোন রোগ হয় বা পানিতে ভেজার কারণে যদি কোন রোগ হয় তাহলে রাসটক্স ৩০ দুই ফোঁটা করে জিভে দিয়ে দিনে চার বার সেবন করলে ভালো কাজ করে। গা হাত পা ব্যথা করলে, জ্বর, মাথা ব্যথা, সর্দি, কাশি এসব ক্ষেত্রেও রাসটক্স ৩০ খুবই কার্যকরী। এছাড়াও অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে যদি গা হাত পা ব্যথা বা মাংসপেশীর ব্যাথা হয়, মাজা ব্যথা বা হাঁটুর ব্যথা ইত্যাদিতেও রাসটক্স ৩০ অত্যন্ত ভালো ফলপ্রদ।
৭। ক্যালেন্ডুলা মাদার টিংচার: চোট লাগার কারণে বা কেটে গেলে যদি রক্তপাত হয় তাহলে ক্যালেন্ডুলা মাদার টিংচার অল্প জলের সাথে মিশিয়ে তুলো দিয়ে কাটা স্থানে লাগালে ঘা শুকিয়ে যাবে। এটি যদি ফোঁড়ার ঘায়ে লাগানো হয় তাহলে ও ভালো ফল পাওয়া যায়।