বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৯

নাকের এলার্জি দূর করার হোমিওপ্যাথিক ঔষধ


নাকের এলার্জি বা এলার্জিক রাইনাইটিস মূলত একটি এলার্জি  জনিত সমস্যা।এতে নাকের ঝিল্লী ও ঝিল্লীর নিচের অংশ বা তার আশেপাশের অংশ ফুলে গিয়ে নাক বন্ধ হয়ে যায়। এটির কারণ অনুযায়ী একে কোল্ড অ্যালার্জি বা ডাস্ট এলার্জি বলা হয়।নাকের এলার্জির প্রধান কারণ হচ্ছে ধুলোবালিঃ ধুলোবালি যদি নাকের ভেতর ঢুকে যায় তাহলে ডাস্ট এলার্জি হতে পারে। দ্বিতীয় কারণ হলো বংশগতঃ পরিবারে বাবা-মা বা ভাই-বোনের কারো যদি এলার্জি থাকে তাহলে অন্যদেরও নাকের এলার্জি হতে পারে। তৃতীয় কারণ হলো আবহাওয়ার পরিবর্তনঃ আবহাওয়ার পরিবর্তন জনিত কারণে ঠান্ডা লেগে নাকের এলার্জি হতে পারে। এছাড়াও যদি বায়ু দূষিত হয়ে যায়, সেই দূষিত বায়ুতে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার কারণে নাকের এলার্জি হয়। ধোঁয়া যদি নাকের ভেতর ঢুকে যায়, সেক্ষেত্রেও নাকের এলার্জি হয়। খাবারের গন্ডগোলের কারণেও নাকের এলার্জি হতে পারে অর্থাৎ যে সমস্ত খাবার খেলে এলার্জি হয় যেমন বেগুন,ডিম, কচু শাক, ইলিশ মাছ ইত্যাদি খাওয়ার কারণেও অনেকের এলার্জি হয়। নাকে যদি কোন ধরনের ইনফেকশন হয় সেক্ষেত্রেও নাকের এলার্জি হতে পারে। 

নাকের এলার্জি
লক্ষণঃ নাকের এলার্জি যেকোন ঋতুতে যেকোন বয়সের নারী-পুষের মধ্যেই দেখা যায়। নাকের এলার্জি হলে নাক দিয়ে কাঁচা পানি বের হয়, বার বার হাঁচি হয়, নাক চুলকায়, কাশি হয়, মাথা ব্যাথা হয়, চোখ দিয়ে পানি বের হয়, চোখ চুলকায়।

ঔষধঃ নাকের এলার্জির ক্ষেত্রে একটি কার্যকরী জার্মান হোমিওপ্যাথিক কম্বিনেশন ঔষধ হলো এডেল-20 এই ঔষধটিতে যে সমস্ত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ মেশানো রয়েছে তা হলো।
১। আয়লানথাস গ্ল্যান্ডুলাস ৪ এক্সঃ যা ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, ইনফেকশনের কারণে যদি নাকের এলার্জি হয়ে থাকে তা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। 
২। কোমোক্লেডিয়া ৬ এক্সঃ যা চোখের জ্বলন, চোখের চুলকানি, চামড়ার চুলকানি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৩। ইউফ্রেশিয়া ৬ এক্সঃ যা চোখের জ্বলন, চোখের পানি ঝড়া, নাকের জ্বলন, নাকের পানি ঝরা, নাকের এলার্জি দূর করতে সাহায্য করে। 
৪। গ্র্যাটিওলা ৪ এক্সঃ যেটি পেটের গন্ডগোল এর কারনে যদি এলার্জি হয় তা দূর করতে সাহায্য করে। 
৫। যুগলান ৪ এক্সঃ যা চামড়ার এলার্জি দূর করতে সাহায্য করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। 
৬। উকুবাকা ৪ এক্সঃ যা ফ্লু বা ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে এর ফলে যদি এলার্জি হয় তা দূর করে। 
৭। সারসা প্যারিলা ৮ এক্সঃ যা আমাদের শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে, রাইনাইটিস নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে, চোখের এলার্জি, নাকের এলার্জি এবং এর সাথে যদি সাইনোসাইটিস হয়ে থাকে তার ক্ষেত্রেও সালসা প্যারিলা ৮ এক্স ঔষধ টি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 
৮। টেরাস্কাকাম ১২ এক্সঃ যা আমাদের লিভার, গলব্লাডার, কিডনির কাজকে সক্রিয় করে দিয়ে আমাদের শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে এলার্জি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

এসমস্ত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিয়ে এডেল-20 হোমিওপ্যাথিক কম্বিনেশন ওষুধ টি তৈরি হয়।এটি বড়রা এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ পানিতে ২০ ফোঁটা মিশিয়ে দিনে তিনবার খাবার ৩০ মিনিট পূর্বে খাবেন আর ছোটরা ১০ ফোঁটা করে দিনে তিনবার খাবে।

নাকের এলার্জির কার্যকরী বায়োকেমিক কম্বিনেশন হলো বি সি-৫। এতে যে সমস্ত বায়োকেমিক ঔষধ মেশানো রয়েছে তা হলো ফেরাম ফস যা আবহাওয়ার পরিবর্তন জনিত কারণে যদি ঠান্ডা লেগে এলার্জি হয় তা দূর করতে সাহায্য করে। মেশান রয়েছে কালি মিউর, নেট্রাম মিউর, কালি সালফ ইত্যাদি বায়োকেমিক ঔষধ যা এলার্জির ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এটি বড়রা ৪ টি করে ট্যাবলেট দিনে তিনবার চিবিয়ে খাবেন আর ছোটরা ২ টি করে ট্যাবলেট দিনে তিনবার খাবে।

নাকের এলার্জির ক্ষেত্রে যদি নাক বা চোখ দিয়ে পানি বের হয়, বার বার হাঁচি হয় সেক্ষেত্রে এলিয়াম সিপা-৩০ বড়রা ৩ ফোঁটা করে জিভে দিয়ে দিনে তিনবার খাবেন। শরীরে যদি চর্ম রোগ থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে সে ক্ষেত্রে সালফার-৩০ প্রতিদিন সকালে ৩ ফোঁটা করে জিভে দিয়ে দিনে একবার খাবেন। যদি চর্মরোগ থাকে, স্বাস্থ্য থলথলে হয়, চেহারা পরিষ্কার হয় তাহলে ক্যালকেরিয়া কার্ব-৩০ তিন ফোঁটা করে দিনে দুইবার খাবেন। ছোটরা খেলে এক ফোঁটা করে এক চামচ পানিতে দিয়ে দিনে দুইবার খাবে। নাকের এলার্জির ক্ষেত্রে যদি কফ থাকে, কাশি হয় সে ক্ষেত্রে ক্যালি বাইক্রম-৩০ তিন ফোঁটা করে জিভে দিয়ে দিনে তিনবার খাবেন আর ছোটরা এক ফোঁটা করে এক চামচ পানিতে দিয়ে দিনে তিনবার খাবে।

নাকের কোল্ড এলার্জি বা ডাস্ট এলার্জির ক্ষেত্রে এই ওষুধগুলো সেবন করলে আশা করা যায় খুব শীঘ্রই এলার্জি থেকে মুক্ত হওয়া যাবে।

রবিবার, ১৬ জুন, ২০১৯

লিউকোরিয়া বা সাদাস্রাব রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা


লিউকোরিয়া বা সাদা স্রাব মহিলাদের একটি কমন রোগ। এটি প্রায় মহিলার মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। এটি সাদা স্রাব, শ্বেত স্রাব, শ্বেতপ্রদর বা লিউকোরিয়া নামে পরিচিত। বিভিন্ন কারণে মহিলাদের যোনিপথে সাদা অথবা হলুদ রঙের শ্লেষ্মা জাতীয় তরল পদার্থ নির্গত হয় তাকে সাদাস্রাব বা লিউকোরিয়া বলা হয়। সাদাস্রাব বা শ্বেতস্রাব হওয়ার প্রধান কারণ হলো হরমোনের ভারসাম্যহীনতা অর্থাৎ মহিলাদের শরীরে যে ইস্ট্রোজেন হরমোন নির্গত হয় তার ভারসাম্যহীনতার কারণে সাদাস্রাব দেখা দেয়। দ্বিতীয় কারণ হলো যোনিপথের ইনফেকশন তাই ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, পরিষ্কার প্যাড- ন্যাপকিন ব্যবহার করতে হবে। তৃতীয় কারণ হলো খাবার দোষ- যদি মহিলারা খুব অল্প পরিমাণ খাবার খায় তাহলে দুর্বলতাবশত সাদাস্রাব হতে পারে অথবা তৈলাক্ত খাবার, মসলাদার খাবার যদি বেশি খায় বা পুষ্টিকর খাবার কম খায় এক্ষেত্রেও সাদাস্রাব দেখা দিতে পারে। চতুর্থ কারণ হলো ঠান্ডা লাগা- আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণেও সাদাস্রাব হতে পারে, এছাড়াও মহিলারা যদি অত্যধিক পরিশ্রম করে, অধিক সহবাস করে, ধূমপান বা মদ্যপান করে তাহলেও সাদাস্রাব হতে পারে।

সাদাস্রাব বা লিউকোরিয়া

লক্ষণঃ মহিলাদের সাদাস্রাব এর প্রধান লক্ষণ হলো সাদা বা হলুদ বা ডিমের সাদা অংশের ন্যায় শ্লেষ্মা জাতীয় জলীয় পদার্থ যোনিপথ দিয়ে নির্গত হয়। এতে কোন কোন সময় দুর্গন্ধ থাকে, জ্বালা থাকে এবং চুলকানি থাকে।তলপেটে ব্যথা থাকে, মেজাজ খিটখিটে থাকে, রোগা হয়ে যায়, হজমের গন্ডগোল থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। সাদাস্রাব যদি দীর্ঘদিন থাকে তাহলে যোনীতে ক্ষত বা ভ্যাজাইনাল আলসার দেখা দেয় এমনকি এটি যদি ঠিকমতো চিকিৎসা করা না হয় তাহলে যোনীতে ক্যান্সার পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।

সাদাস্রাব এর কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক কম্বিনেশন ঔষধঃ সাদাস্রাবের একটি কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক কম্বিনেশন ঔষধ তৈরি করতে যে ২ টি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দরকার তা হল- ১। অশোকা মাদার টিংচারঃ এটিকে মহিলাদের জরায়ুর টনিক বলা হয়। মহিলাদের জরায়ুর দুর্বলতা, ওভারির দুর্বলতা দূর করতে অশোকা মাদার টিংচার খুব সাহায্য করে। এছাড়া এটি সাদাস্রাব দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ২। হেলেনিয়াস ডি মাদার টিংচারঃ এটি মহিলাদের জরায়ুর দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে। মহিলাদের মাসিকের যেসব সমস্যা আছে তা দূর করতে ও সাদাস্রাব দূর করতে সাহায্য করে। এ দুটি ঔষধ ১৫ এমএল করে নিয়ে দশ বার ভালভাবে ঝাঁকিয়ে ৩০ এমএল মিক্সার তৈরি করে আধা কাপ পানিতে ১৫ ফোঁটা করে দিয়ে দিনে তিনবার খাবার খাওয়ার আধা ঘন্টা পর খেতে হবে। সাদাস্রাব এর আর একটি কার্যকরী ঔষধ হলো ওভা টেস্টা ৩এক্সঃ এটি সাদাস্রাব নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এটি মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণ এর ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনতে সাহায্য করে। ওভা টেস্টা ৩এক্স। এটি দুইটি করে ট্যাবলেট দিনে তিনবার খাবার আধা ঘণ্টা আগে চিবিয়ে খেয়ে সামান্য পানি খেতে হবে। 

সাদাস্রাব দূর করতে একটি চমৎকার বায়োকম্বিনেশন ঔষধ হলো বিসি-১৩। এতে যেসব বায়োকেমিক ঔষধ মেশানো রয়েছে তা হল- ১। ক্যালসিয়াম ফসফোরিকামঃ যা সাদাস্রাব দূর করতে ও শরীরের দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে। ২। কেলি ফসঃ নার্ভের দুর্বলতা ও হরমোনের ইমব্যালেন্স দূর করতে সাহায্য করে। ৩।কেলি সালফঃ এটি সাদাস্রাব এর জ্বালা ও চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে। ৪। নেট্রাম মিউরঃ মহিলাদের দুর্বলতা দূর করতে ও সাদাস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

এ সমস্ত ঔষধ দিয়ে বিসি-১৩ বায়োকম্বিনেশন ওষুধটি তৈরি করা হয়েছে। এটি ৪টি করে ট্যাবলেট দিনে তিনবার খাবার আধা ঘন্টা আগে চিবিয়ে খেয়ে হালকা গরম পানি খেতে হবে। আর ওভা টেস্টা ৩এক্স ট্যাবলেট টি খেলে তার ১০ মিনিট পূর্বে খেতে হবে।

এই ঔষধ গুলি যদি ঠিকমতো সেবন করা হয় তাহলে যাদের সাদা স্রাব নতুন শুরু হয়েছে বা অল্প পরিমাণে সাদাস্রাব হয় তাদের এক সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে আর যাদের রোগ অনেক দিনের পুরাতন বা অনেক বেশি পরিমাণে সাদাস্রাব হয় তাদের তিন মাস পর্যন্ত সেবনে সাদাস্রাব দূর হবে আশা করা যায়।

রবিবার, ২৬ মে, ২০১৯

পুরুষদের সমস্ত যৌন দুর্বলতার একটি আশ্চর্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ



পুরুষদের বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন ধরনের যৌন দুর্বলতা দেখা দেয়। যেমন- ধ্বজভঙ্গ, লিঙ্গের শিথিলতা, দ্রুত বীর্যপাত, যুবকদের মধ্যে দেখা দেয় অধিক স্বপ্নদোষ, প্রস্রাব পায়খানা করার সময় ধাতুপাত, আবার অনেক সময় কোন রকম যৌন চিন্তা করলেই বীর্য বের হয়ে যায়। এর নানা কারণ রয়েছে তার মধ্যে প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত ধাতু ক্ষরণ, অতিরিক্ত সহবাস, হস্তমৈথুন, শরীরের পুষ্টির অভাব, শারীরিক দুর্বলতা, মানসিক দুর্বলতা ইত্যাদি কারণে পুরুষদের এই সমস্ত যৌন সমস্যা দেখা দিতে পারে। পুরুষদের এসমস্ত যৌন সমস্যার ক্ষেত্রে একটি কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক ঔষধ হলো ডামিয়াগ্রা ড্রপ। এই ঔষধটিতে যেসব হোমিওপ্যাথিক ঔষধ মেশানো রয়েছে সেগুলো হলোঃ

ডামিয়াগ্রা ড্রপ


১। ডামিয়ানা মাদার টিংচারঃ স্নায়বিক দুর্বলতার কারণে ধ্বজভঙ্গ, দ্রুত বীর্যপাত, লিঙ্গের শিথিলতা, স্বপ্নদোষ, প্রস্রাব-পায়খানা করার সময় অজ্ঞাতসারে ধাতু বের হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে ডামিয়ানা মাদার টিংচার খুবই কার্যকরী।
২। লাইকোপোডিয়াম ৩এক্সঃ যদি ধাতু দুর্বলতার কারনে বা অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের কারণে যুবকদের মধ্যে বয়স্ক ভাব চলে আসে কিংবা তাদের লিঙ্গ ছোট হয়ে যায়, এছাড়াও যদি ধাতু দুর্বলতা দেখা দেয়, ধ্বজভঙ্গ দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে লাইকোপোডিয়াম অত্যন্ত চমৎকার কাজ করে।
৩। এগনাস কাস্ট মাদার টিংচারঃ অতিরিক্ত হস্তমৈথুন বা অতিরিক্ত সহবাসের ফলে যদি ধ্বজভঙ্গ, লিঙ্গের বক্রতা, লিঙ্গের দুর্বলতা, লিঙ্গ ছোট হয়ে যাওয়া, স্বপ্নদোষ, উত্তেজনা না আসা বা লিঙ্গ শক্ত না হওয়া, তাছাড়া যদি অজ্ঞাতসারে ধাতু নির্গত হয় সেই সমস্ত দুর্বলতা দূর করতে এগনাস কাস্ট মাদার টিংচার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪। এসিড ফস মাদার টিংচারঃ অতিরিক্ত দুর্বলতা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা বিভিন্ন রোগের ফলে যেমন- সুগার, ডায়াবেটিস বা অন্যান্য রোগের ফলে পুরুষদের ধাতু দুর্বলতা, লিঙ্গের শিথিলতা ইত্যাদি দেখা দেয় তাহলে এসিড ফস খুব ভালো কাজ করে।
৫। ওহিমবিনাম মাদার টিংচারঃ এটি লিঙ্গের উপর বিশেষ ভাবে কাজ করে থাকে। লিঙ্গের দুর্বলতা, স্নায়বিক দুর্বলতার কারণে যদি লিঙ্গ ছোট হয়ে যায়, ধ্বজভঙ্গ, লিঙ্গের শিথিলতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ওহিমবিনাম মাদার টিংচার খুবই ভালো কাজ করে।
৬। ক্যালাডিয়াম সেগুইনাম ৩এক্সঃ যা পুরুষদের যৌনাঙ্গের উপর বেশি কাজ করে। এটি ধ্বজভঙ্গ, লিঙ্গের শিথিলতা, ক্ষমতা কম কিন্তু সহবাসের ইচ্ছা শক্তি বেশি সে ক্ষেত্রে এই ওষুধটি খুব কার্যকরী একটি ওষুধ। ক্যালাডিয়াম সেগুইনাম স্বপ্নদোষের ক্ষেত্রেও খুবই কার্যকরী।
৭। সেলেনিয়াম ৩এক্সঃ যদি শারীরিক বা মানসিক দুর্বলতা দেখা যায় এবং এর ফলে যদি যৌন দুর্বলতা দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে সেলেনিয়াম একটি কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক ঔষধ। স্বপ্নদোষ, ধাতু দুর্বলতা, দ্রুত বীর্যপাত ইত্যাদি ক্ষেত্রেও অত্যন্ত কার্যকরী।

এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধের সমন্বয়ে ডামিয়াগ্রা ড্রপ তৈরি হয়ে থাকে তাই এটি পুরুষদের যে কোন যৌন সমস্যায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে এবং ভাল ফল পাওয়া যায়। এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ পানির সাথে ২০ ফোঁটা ওষুধ মিশিয়ে দিনে তিনবার খাবার ৩০ মিনিট আগে খেতে হবে। এটি তিন মাস টানা ব্যবহার করলে অবশ্যই এর ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে। ঔষধ ব্যবহারকালীন সময়ে সহবাস থেকে বিরত থাকাই ভালো সম্ভব না হলে যতটা সম্ভব কম সহবাস করতে হবে। এটি দুর্বলতার উপর ভিত্তি করে ৬ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে।

বুধবার, ১৫ মে, ২০১৯

আমাশয়ের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

আমাশয় বা ডিসেন্ট্রি হলো অন্ত্রের প্রদাহজনিত একটি রোগ। যার ফলে মলের সাথে রক্ত মিশ্রিত মিউকাস নির্গত হয়। আমাশয় প্রধানত দুই প্রকার ১। বেসিলারী বা ব্যাকটেরিয়াল আমাশয় এবং ২।এ্যামেবিক আমাশয়। আমাশয় সাধারণত পঁচা ফল, পঁচা বাসি খাবার, দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা জায়গায় বসবাস অথবা যে সমস্ত জায়গায় খোলামেলা স্থানে পায়খানা করা হয় সেই সমস্ত জায়গা থেকে আমাশয় ছড়ায়। ব্যাকটেরিয়াল আমাশয়ের কারণ হলো সিগেলা, ক্যাম্পিলোভ্যাক্টার, সালমেনোলা ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া আমাদের অন্ত্রে আক্রমণ করে তখন ব্যাকটেরিয়াল আমাশয় হয়। এ্যামিবিক আমাশয়ের কারণ হল এ্যামিবা নামক এককোষী প্রাণী বা প্যারাসাইটের অন্ত্রে আক্রমণের ফলে এ্যামিবিক আমাশয় হয়।

Dysentery

লক্ষণঃ ব্যাকটেরিয়াল আমাশয়ের ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৫০ বার পায়খানার বেগ হবে, কোথানী, শরীর ব্যথা, জ্বর,অন্ত্রে ক্ষত থাকবে। মল পরীক্ষায় সিগেলা বা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া থাকবে। সাদা মিউকাস নির্গত হবে। এ্যামেবিক আমাশয়ের ক্ষেত্রে এসমস্ত লক্ষণ থাকবে কিন্তু অন্ত্রে ক্ষত থাকবে না। মল পরীক্ষায় প্যারাসাইট লক্ষ্য করা যাবে।

চিকিৎসাঃ আমাশয়ের একটি কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক কম্বিনেশন ঔষধ হলো 'আর ৪'। এই ঔষধ টি নতুন বা পুরাতন যেকোনো আমাশয়ের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। এটি নতুন আমাশয়ের ক্ষেত্রে ১৫ ফোঁটা করে দিনে চারবার আধাকাপ জলের সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। ছোটরা সাত ফোঁটা খাবে। পুরাতন আমাশয় এর ক্ষেত্রে ১৫ ফোঁটা করে দিনে তিনবার খেতে হবে। আমাশয়ের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বায়োকেমিক কম্বিনেশন হলো 'বিসি ৯'। এটি নতুন আমাশয়ের ক্ষেত্রে চারটি করে বড়ি দিনে চারবার খেতে হবে আর পুরাতন আমাশয় এর ক্ষেত্রে চারটি করে বড়ি দিনে তিনবার খেতে হবে। ছোটদের ক্ষেত্রে দুটি করে বড়ি খেতে হবে। নতুন ও পুরাতন আমাশয়ের একটি চমৎকার মিকচার ঔষধ তৈরি করতে হলে তিনটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ লাগবে যেমন ১। কুড়চি মাদার টিংচার ২। চ্যাপারা এম মাদার টিংচার এবং ৩। ঈগলমার মাদার টিংচার। প্রতিটি ঔষধ ১০ এমএল করে নিয়ে ৩০ এমএল মিকচার তৈরি করতে হবে। এটি ২৫ ফোঁটা করে আধা কাপ জলে মিশিয়ে দিনে তিনবার খেতে হবে। রক্ত আমাশয় হলে মার্ক কর ৩০ বড়রা তিন ফোঁটা করে দিনে চারবার নতুন আমাশয় এর ক্ষেত্রে আর পুরাতন আমাশয়ের ক্ষেত্রে দিনে তিনবার। রক্ত কম হলে, মিউকাস বেশি থাকলে মার্কসল ৩০ তিন ফোঁটা করে দিনে চারবার নতুন ক্ষেত্রে আর পুরাতন ক্ষেত্রে দিনে তিনবার। ছোটদের ক্ষেত্রে এক ফোঁটা করে খেতে হবে।

এই ঔষধগুলি খেলে নতুন আমাশয় খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে আর পুরাতন আমাশয় কিছুদিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যাবে আশা করা যায়।

রবিবার, ১২ মে, ২০১৯

টিউমার চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি


টিউমার ইংরেজি শব্দ এর বাংলা প্রতিশব্দ হল অর্বুদ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে টিউমার বলতে একটি বিশেষ নিদান ত্বাত্তিক অবস্থাকে বুঝানো হয়। টিউমার ঠিক কি কারণে মানবদেহে হয় তা আজো আমাদের কাছে অজানা। আমাদের শরীরের মাংসপেশীতে বা হারে বা যে কোন স্থানে যদি দেহ কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়, শরীরের যেকোনো স্থানে যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ফুলে যায় বা উঁচু হয়ে যায় তাকে টিউমার বলে। টিউমার শরীরের যে স্থানে হয় সেই স্থান অনুযায়ী টিউমারের নাম হয়ে থাকে। যেমন- মহিলাদের ওভারিতে টিউমার হলে তাকে ওভারিয়ান টিউমার বলে, শিরদাঁড়াতে টিউমার হলে তাকে স্পাইনাল টিউমার বলে। 

টিউমার তিন ধরনের হয় যেমন- ১। হিস্টোমা ২। সাইটোমা এবং ৩। টেরাটোমা। হিস্টোমা টিউমার আবার দুই প্রকারের হয় যেমন- ১।ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা দূষিত টিউমার ২। বিনাইন বা ইনোসেন্ট বা নির্দোষ টিউমার।

টিউমার

ম্যালিগন্যান্ট টিউমারঃ ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের বৃদ্ধি খুব তাড়াতাড়ি হয়। এটি নিরেট, শক্ত ও কঠিন হয়। আক্রান্ত স্থানের কাছাকাছি গ্রন্থিগুলোও আক্রান্ত হয়। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের সাথে যে চামড়া সংযুক্ত থাকে তা দৃঢ় বা শক্তভাবে সংযুক্ত থাকে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমার শক্ত থাকে তাই নার্ভের উপর চাপ পড়ে বলে ব্যাথা হয়। এ ধরনের টিউমার থেকেই পরবর্তীতে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়।

বিনাইন বা ইনোসেন্ট টিউমারঃ এটি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়, নরম হয়, শক্ত হয় না, আবরণ থাকে না। টিউমারের কাছের গ্রন্থি গুলি আক্রান্ত হয় না। টিউমারের সাথে যে সংযুক্ত চামড়া তা আলাদা থাকে। টিপলে বুঝা যায় যে, সেটি ভিতরে নড়াচড়া করছে। এই টিউমারের কোন যন্ত্রণা হয় না।

টিউমার চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ঔষধঃ যদি গলায় চর্বিযুক্ত টিউমার হয় তাহলে ব্যারাইটা কার্ব ২০০ সপ্তাহে দুইবার ৫ ফোঁটা করে জিভে দিয়ে খেতে হবে। পাথরের মত শক্ত টিউমার হলে ক্যালকেরিয়া ফ্লোর বায়োকেমিক ৬ এক্স থেকে ১২ এক্স অথবা ক্যালকেরিয়া ফ্লোর ২০০ সপ্তাহে দুই বার ৫ ফোঁটা করে সকালে খালি পেটে খেতে হবে। সাইকোসিস ধাতু যুক্ত টিউমার হলে যেমন- টিউমারটি নরম হবে, টিউমার এর উপর ছোট ছোট আঁচিল বা অর্বুদ থাকবে আর সেই সাথে সেই ব্যক্তির শরীরে অনেক আঁচিল থাকবে এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে থুজা ১এম ৫ ফোঁটা করে জিভে দিয়ে সপ্তাহে একবার সকালে খেতে হবে। গ্রান্ডে যদি টিউমার হয় যেমন- স্তনে বা অন্ডকোষে তাহলে কোনিয়াম ২০০ সপ্তাহে ২ বার সকালে খালি পেটে ৫ ফোঁটা করে জিভে দিয়ে খেতে হবে। চর্বিযুক্ত যেকোনো টিউমারের ক্ষেত্রে ক্যালকেরিয়া কার্ব ২০০ ঔষধটি দিনে একবার করে সকালে খালি পেটে ৫ ফোঁটা করে জিভে দিয়ে খেতে হবে। মহিলাদের স্তনে যদি টিউমার হয় তাহলে ফাইটোলাক্কা ৩০ ঔষধ টি দিনে দুইবার ৩ ফোঁটা করে জিভে দিয়ে খেতে হবে। কানে বা নাকে যদি ছোট ছোট টিউমার হয় তাহলে থুজা ৩০ ঔষধটি দিনে দুইবার ৩ ফোঁটা করে খেতে হবে। টিউমারের একটি কার্যকরী জার্মান হোমিওপ্যাথিক কম্পোজিশন ঔষধ হচ্ছে আর-১৭। এই ঔষধ টি যেকোনো টিউমারের ক্ষেত্রে চমৎকার কাজ করে। এটি টিউমার ড্রপ নামেও পরিচিত। এটি আমাদের শরীরের যে কোন স্থানে টিউমার এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এই ঔষধটি দিনে তিনবার ১৫ ফোঁটা করে আধা কাপ পানির সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। 

প্রথমে যে ঔষধ গুলির কথা বলা হলো লক্ষণ অনুযায়ী সেই ঔষধ গুলি খাবার সাথে সাথে এই হোমিওপ্যাথিক কম্পোজিশন আর-১৭ ঔষধ টি কিছুদিন খেলে টিউমার থেকে মুক্ত হওয়া যাবে আশা করা যায়।

বুধবার, ৮ মে, ২০১৯

কোষ্ঠকাঠিন্যের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা


কোষ্ঠকাঠিন্য রোগটি প্রায় মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। এ রোগের মাধ্যমে আরো নতুন নতুন রোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানা পরিষ্কার না হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম। ঠিকমতো ফাইবার বা আঁশ যুক্ত খাবার না খাওয়া, যেমন- ফল, শাকসবজি, রুটি ইত্যাদি না খাওয়া। সময় মত খাবার না খাওয়া, মসলাদার খাবার, তেলেভাজা খাবার, চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া। এই সমস্ত খাবারের অনিয়মের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। দ্বিতীয় কারণ হলো পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা। তৃতীয় কারণ হচ্ছে অলসতা অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি ঠিকমত পরিশ্রম না করে, শারীরিক ব্যায়াম না করে, অলস জীবন-যাপন করে তার ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্যের চতুর্থ কারণ হলো এলোপ্যাথিক ঔষধের পার্শপ্রতিক্রিয়া যেমন কিছু ব্যথার ঔষধ বা ক্যালসিয়াম খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। এছাড়াও কিছু রোগ থাকলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে যেমন- কারও আইবিএস থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, সার্জারি করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, কোন মহিলা গর্ভবতী থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, এছাড়াও বয়স্ক মানুষের বেলাতেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
Constipation

লক্ষণঃ কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পায়খানা পরিষ্কার হয় না, পেট ভার হয়ে থাকে, নিয়মিত পায়খানা হয় না, পেট ব্যথা করে, মনে হয় পায়খানা পেটে রয়ে গেছে, পেট ফুলে থাকে, খাওয়ার অরুচি থাকে, মাথা ব্যাথা হয়, ঘুম ঠিকমতো হয় না। এ সমস্ত লক্ষণ কোষ্ঠকাঠিন্যের বেলায় থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার চমৎকার একটি হোমিওপ্যাথিক কম্বিনেশন ঔষধ হচ্ছে ওয়াই লাক্স ট্যাবলেট। এই ঔষধে মেশানো রয়েছে ফেনপ থেলিন ১এক্স যা কোষ্ঠকাঠিন্যের খুবই কার্যকরী ঔষধ। মেশানো রয়েছে সিনা ১এক্স ও সালফার ১এক্স। 

বড়রা দুটি করে ট্যাবলেট প্রতিদিন রাতে চিবিয়ে খেয়ে এক কাপ হালকা গরম পানি খাবে আর ছোটরা একটি ট্যাবলেট চিবিয়ে খেয়ে আধা কাপ হালকা গরম পানি খাবে। এভাবে ট্যাবলেটটি খেলে প্রথম দিন থেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হতে থাকবে এবং এক থেকে তিন মাসের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, এই ঔষধ টি খাওয়ার সময় যদি ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হয় তাহলে ওষুধ খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। আর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হলে খাওয়া দাওয়া সময় মত করতে হবে, পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে এবং পরিমিত পরিশ্রম করতে হবে।

মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০১৯

গ্যাস্ট্রিক আলসারের কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক ঔষধ


আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম বা পাচনতন্ত্রে যদি ক্ষত বা আলসার হয় তাকে পেপটিক আলসার বলে। পেপটিক আলসার তিন প্রকার যথা- ১। গ্যাস্ট্রিক আলসার যেটি আলসার অব  স্টোমাক বা পাকস্থলীর ক্ষত ২। ইসোফ্যাগিল আলসার ৩। ডিওডেনাল আলসার 

ছবি: গ্যাস্ট্রিক আলসার
গ্যাস্ট্রিক আলসারের প্রধান কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া। হেলিকো ব্যাকটার পাইলোরি নামে এক প্রকার ব্যকটেরিয়া যদি আমাদের পাকস্থলীতে প্রদাহ বা সংক্রমণ ঘটায় তাহলে পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি হয় বা গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়। এছাড়া দ্বিতীয় যে কারণ রয়েছে তা হলো অতিরিক্ত এলোপ্যাথিক ঔষধের ব্যবহার, অতিরিক্ত ব্যথার ঔষধ ব্যবহারের কারণে গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়ে থাকে। অতিরিক্ত মদ্যপান বা ধূমপানের কারণেও গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়। গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ হলো পেট ব্যথা। বিশেষ করে খাবার পরে পরেই পেট ব্যথা দেখা দেয়। দ্বিতীয় লক্ষণ হল মুখ দিয়ে রক্ত বের হবে অথবা পায়খানার সাথে লাল রক্ত যাবে। গ্যাস্ট্রিক আলসারের তৃতীয় লক্ষণ হলো বমি ভাব থাকবে, বমির সাথে রক্ত উঠবে। এছাড়া আরো, ক্ষুধামন্দা, খিদে লাগবে না, বদহজম হবে, ওজন কমে যাবে।

গ্যাস্ট্রিক আলসারের কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক ঔষধঃ গ্যাস্ট্রিক আলসারের কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক ঔষধ তৈরি করতে তিনটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ লাগবে ১। সিমফাইটাম মাদার টিংচার ২। হাইড্রাসটিস ক্যান মাদার টিংচার ৩। রুবিনিয়া মাদার টিংচার। এই ঔষধ গুলি ১০ এমএল করে নিয়ে ৩০ এমএল মিক্সার তৈরি করে আধা কাপ পানিতে ২৫ ফোঁটা করে দিয়ে দিনে তিনবার খাবার আধা ঘন্টা পূর্বে খেতে হবে। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ অনুযায়ী যেমন রোগী যদি পেটে জ্বালা অনুভব করে, বমি হয়, বমি ভাব থাকে, রোগীর মৃত্যু ভয় থাকে বা রোগী যদি দুর্বল হয় তবে আর্সেনিক ৩০ তিন ফোঁটা করে জিভে দিয়ে দিনে তিনবার খাবার আধা ঘন্টা পর খেতে হবে। যদি রোগীর কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে, যদি নেশা করার ফলে গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়ে থাকে তাহলে নাক্স ভমিকা ৩০ তিন ফোঁটা করে দিনে তিনবার খাবার ৩০ মিনিট পর খেতে হবে। যদি বারবার ঢেকুর উঠে তাহলে কার্বোভেজ ৩০ তিন ফোঁটা করে দিনে তিনবার খেতে হবে। গ্যাস্ট্রিক আলসারের একটি কার্যকরী বায়োকেমিক কম্বিনেশন ঔষধ হলো বিসিবি ২৫। এই ঔষধটি গ্যাস, অম্বল, বদহজম, বুক জ্বালা, গ্যাস্ট্রিক আলসারের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী একটি বায়োকেমিক কম্বিনেশন ঔষধ। পাঁচটি করে বড়ি দিনে তিনবার চিবিয়ে খেয়ে হালকা গরম পানি খেতে হবে। এতে আশা করা যায়, গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০১৯

হোমিও প্রাথমিক চিকিৎসা

আমাদের চারপাশে সব সময় কোন না কোন অসুখ বিসুখ লেগেই থাকে, যেমন- কারো বাড়ির কোন সদস্যের হঠাৎ পুড়ে যাওয়া, আঘাত লাগা, কারো জ্বর হওয়া, কারো সর্দি হওয়া, কারো পেটের পীড়া হওয়া ইত্যাদি এই সমস্ত অসুখ বিসুখ থেকে রেহাই পেতে প্রত্যেকের বাড়িতেই হোমিওপ্যাথিক প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ রাখা প্রয়োজন প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ সাতটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ বাড়িতে রাখলে আমাদের জটিল কোনো সমস্যা ব্যতীত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না 

Homeopathic First Aid


সাতটি কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক ঔষধঃ

একোনাইট ৩০: একোনাইট ৩০ ঔষধ টি বাড়িতে অবশ্যই রাখা উচিত এই ঔষধটি ঠান্ডা লেগে যদি কোন রোগ হয়, যেমন- সর্দি, কাশি, জ্বর এই ধরনের রোগে চমৎকার ফলপ্রদ এই ঔষধটি আরো যে সমস্ত রোগের কার্যকরী তা হচ্ছে হঠাৎ যদি ভয় পেয়ে কোন রোগ বা হঠাৎ কোনো দুর্ঘটনায় মৃত্যু ভয় এসে যায়, ঠোঁট সাদা হয়ে যায়, চোখ বুঝতে থাকে সে ক্ষেত্রেও একোনাইট ৩০ ভালো কাজ করে হঠাৎ মাথা ব্যাথা, হাত-পা ব্যথা করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী দুই ঘন্টা পর পর দুই ফোঁটা করে সেবন করতে হবে

আর্নিকা ৩০: আমাদের বাড়িতে দ্বিতীয় যে ওষুধটি রাখা দরকার তা হলো আর্নিকা ৩০ কোন রকমভাবে কেউ আঘাত পেলে, পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলে, আমাদের বাচ্চারা হঠাৎ পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলে সে ক্ষেত্রে আর্নিকা ৩০ ভালো কাজ করে অনেক সময় চোট লাগার ফলে রক্ত জমে যায়, কালশিরা পড়ে যায় সে ক্ষেত্রে বড়রা ফোঁটা, শিশুরা এক ফোঁটা জিভে দিয়ে সেবন করলে ব্যথা সেরে যায় এছাড়া কারো মাজা ব্যথা, কারো হাঁটুর ব্যথায় আর্নিকা ৩০ দুই ফোঁটা করে দিনে চারবার খেলে ব্যথা সেরে যাবে চুল পড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত ভালো কাজ করে যে কোন রকম চোট বা আঘাত লাগলে আর্নিকা ৩০ সেবনে ভালো ফল পাওয়া যায়

নাক্স ভমিকা ৩০:  এই ঔষধটি পেটের গন্ডগোল এর ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী সামগ্রিক ভাবে বলতে গেলে নাক্স ভমিকা ৩০ আমাদের পেটের যাবতীয় গন্ডগোল, যেমন-গ্যাস, বদহজম, বুক জ্বালা, মুখ টক হয়ে যাওয়া, মুখ তিতা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী এর সাথে সাথে যদি কারো ঘুম কম হয় তাহলে নাক্স ভমিকা ৩০ দিনে তিনবার দুই ফোঁটা করে সেবন করলে ঘুম ঠিকঠাক মত হবে আবার অনিদ্রার কারণে বা রাত জাগার কারণে বা অত্যধিক পরিশ্রমের কারনে যদি কোন রোগ হয় তাহলে নাক্স ভমিকা ৩০ দিনে চারবার দুই ফোঁটা করে নিলে ভালো কাজ করে পেটের গন্ডগোল এর কারনে যদি বমি হয় সে ক্ষেত্রে এটি চমৎকার কাজ করে তাছাড়া বাড়িতে যদি অন্য কোন ঔষধ না থাকে যদি নাক্স ভমিকা ৩০ থাকে তাহলে সর্দি, কাশি, জ্বর বা অন্য যে কোন রোগের ক্ষেত্রে দুই ফোঁটা করে দুই ঘন্টা পর পর সেবন করলে আরাম হয়ে যেতে পারে

ব্রায়োনিয়া ৩০: ৪র্থত যে ঔষধটি আমাদের বাড়িতে রাখা প্রয়োজন সেটি হল ব্রায়োনিয়া ৩০ এটিকে হোমিওপ্যাথির প্যারাসিটামল বলা হয় যে কোন জ্বরের ক্ষেত্রে বা মাথা ব্যথা, সর্দি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে এছাড়া ব্রায়োনিয়া ৩০ গ্যাস, কোষ্ঠ্য কাঠিন্যের ক্ষেত্রেও ভালো কাজ করে দুই ঘণ্টা পরপর দুই ফোঁটা করে সেবন করতে হবে

আর্সেনিক ৩০: যদি বিষাক্ত খাবার এর ফলে বা ফুড পয়জনিং এর কারণে যদি কোন রোগ হয়, বমি হয়, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হয়, পেটে জ্বালা হয় এক্ষেত্রে আর্সেনিক ৩০ দুই ঘন্টা পর পর দুই ফোঁটা করে সেবন করলে ভাল ফল পাওয়া যায় অনেক সময় দেখা যায় বিষাক্ত পানি পানের কারণে বিভিন্ন রোগ হয়, সর্দি-কাশি বা চর্মরোগ হয় এক্ষেত্রেও এটি ভালো ফলপ্রদ বিষাক্ত খাবার খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হলেও ঔষধটি ভালো কাজ করে

 রাসটক্স ৩০: যদি বর্ষাকালীন কোন রোগ হয় বা পানিতে ভেজার কারণে যদি কোন রোগ হয় তাহলে রাসটক্স ৩০ দুই ফোঁটা করে জিভে দিয়ে দিনে চার বার সেবন করলে ভালো কাজ করে গা হাত পা ব্যথা করলে, জ্বর, মাথা ব্যথা, সর্দি, কাশি এসব ক্ষেত্রেও রাসটক্স ৩০ খুবই কার্যকরী এছাড়াও অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে যদি গা হাত পা ব্যথা বা মাংসপেশীর ব্যাথা হয়, মাজা ব্যথা বা হাঁটুর ব্যথা ইত্যাদিতেও রাসটক্স ৩০ অত্যন্ত ভালো ফলপ্রদ


ক্যালেন্ডুলা মাদার টিংচার: চোট লাগার কারণে বা কেটে গেলে যদি রক্তপাত হয় তাহলে ক্যালেন্ডুলা মাদার টিংচার অল্প জলের সাথে মিশিয়ে তুলো দিয়ে কাটা স্থানে লাগালে ঘা শুকিয়ে যাবে এটি যদি ফোঁড়ার ঘায়ে লাগানো হয় তাহলে ভালো ফল পাওয়া যায়