বুধবার, ৮ মে, ২০১৯

কোষ্ঠকাঠিন্যের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা


কোষ্ঠকাঠিন্য রোগটি প্রায় মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। এ রোগের মাধ্যমে আরো নতুন নতুন রোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানা পরিষ্কার না হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম। ঠিকমতো ফাইবার বা আঁশ যুক্ত খাবার না খাওয়া, যেমন- ফল, শাকসবজি, রুটি ইত্যাদি না খাওয়া। সময় মত খাবার না খাওয়া, মসলাদার খাবার, তেলেভাজা খাবার, চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া। এই সমস্ত খাবারের অনিয়মের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। দ্বিতীয় কারণ হলো পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা। তৃতীয় কারণ হচ্ছে অলসতা অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি ঠিকমত পরিশ্রম না করে, শারীরিক ব্যায়াম না করে, অলস জীবন-যাপন করে তার ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্যের চতুর্থ কারণ হলো এলোপ্যাথিক ঔষধের পার্শপ্রতিক্রিয়া যেমন কিছু ব্যথার ঔষধ বা ক্যালসিয়াম খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। এছাড়াও কিছু রোগ থাকলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে যেমন- কারও আইবিএস থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, সার্জারি করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, কোন মহিলা গর্ভবতী থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, এছাড়াও বয়স্ক মানুষের বেলাতেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
Constipation

লক্ষণঃ কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পায়খানা পরিষ্কার হয় না, পেট ভার হয়ে থাকে, নিয়মিত পায়খানা হয় না, পেট ব্যথা করে, মনে হয় পায়খানা পেটে রয়ে গেছে, পেট ফুলে থাকে, খাওয়ার অরুচি থাকে, মাথা ব্যাথা হয়, ঘুম ঠিকমতো হয় না। এ সমস্ত লক্ষণ কোষ্ঠকাঠিন্যের বেলায় থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার চমৎকার একটি হোমিওপ্যাথিক কম্বিনেশন ঔষধ হচ্ছে ওয়াই লাক্স ট্যাবলেট। এই ঔষধে মেশানো রয়েছে ফেনপ থেলিন ১এক্স যা কোষ্ঠকাঠিন্যের খুবই কার্যকরী ঔষধ। মেশানো রয়েছে সিনা ১এক্স ও সালফার ১এক্স। 

বড়রা দুটি করে ট্যাবলেট প্রতিদিন রাতে চিবিয়ে খেয়ে এক কাপ হালকা গরম পানি খাবে আর ছোটরা একটি ট্যাবলেট চিবিয়ে খেয়ে আধা কাপ হালকা গরম পানি খাবে। এভাবে ট্যাবলেটটি খেলে প্রথম দিন থেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হতে থাকবে এবং এক থেকে তিন মাসের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, এই ঔষধ টি খাওয়ার সময় যদি ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হয় তাহলে ওষুধ খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। আর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হলে খাওয়া দাওয়া সময় মত করতে হবে, পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে এবং পরিমিত পরিশ্রম করতে হবে।

মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০১৯

গ্যাস্ট্রিক আলসারের কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক ঔষধ


আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম বা পাচনতন্ত্রে যদি ক্ষত বা আলসার হয় তাকে পেপটিক আলসার বলে। পেপটিক আলসার তিন প্রকার যথা- ১। গ্যাস্ট্রিক আলসার যেটি আলসার অব  স্টোমাক বা পাকস্থলীর ক্ষত ২। ইসোফ্যাগিল আলসার ৩। ডিওডেনাল আলসার 

ছবি: গ্যাস্ট্রিক আলসার
গ্যাস্ট্রিক আলসারের প্রধান কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া। হেলিকো ব্যাকটার পাইলোরি নামে এক প্রকার ব্যকটেরিয়া যদি আমাদের পাকস্থলীতে প্রদাহ বা সংক্রমণ ঘটায় তাহলে পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি হয় বা গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়। এছাড়া দ্বিতীয় যে কারণ রয়েছে তা হলো অতিরিক্ত এলোপ্যাথিক ঔষধের ব্যবহার, অতিরিক্ত ব্যথার ঔষধ ব্যবহারের কারণে গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়ে থাকে। অতিরিক্ত মদ্যপান বা ধূমপানের কারণেও গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়। গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ হলো পেট ব্যথা। বিশেষ করে খাবার পরে পরেই পেট ব্যথা দেখা দেয়। দ্বিতীয় লক্ষণ হল মুখ দিয়ে রক্ত বের হবে অথবা পায়খানার সাথে লাল রক্ত যাবে। গ্যাস্ট্রিক আলসারের তৃতীয় লক্ষণ হলো বমি ভাব থাকবে, বমির সাথে রক্ত উঠবে। এছাড়া আরো, ক্ষুধামন্দা, খিদে লাগবে না, বদহজম হবে, ওজন কমে যাবে।

গ্যাস্ট্রিক আলসারের কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক ঔষধঃ গ্যাস্ট্রিক আলসারের কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক ঔষধ তৈরি করতে তিনটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ লাগবে ১। সিমফাইটাম মাদার টিংচার ২। হাইড্রাসটিস ক্যান মাদার টিংচার ৩। রুবিনিয়া মাদার টিংচার। এই ঔষধ গুলি ১০ এমএল করে নিয়ে ৩০ এমএল মিক্সার তৈরি করে আধা কাপ পানিতে ২৫ ফোঁটা করে দিয়ে দিনে তিনবার খাবার আধা ঘন্টা পূর্বে খেতে হবে। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ অনুযায়ী যেমন রোগী যদি পেটে জ্বালা অনুভব করে, বমি হয়, বমি ভাব থাকে, রোগীর মৃত্যু ভয় থাকে বা রোগী যদি দুর্বল হয় তবে আর্সেনিক ৩০ তিন ফোঁটা করে জিভে দিয়ে দিনে তিনবার খাবার আধা ঘন্টা পর খেতে হবে। যদি রোগীর কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে, যদি নেশা করার ফলে গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়ে থাকে তাহলে নাক্স ভমিকা ৩০ তিন ফোঁটা করে দিনে তিনবার খাবার ৩০ মিনিট পর খেতে হবে। যদি বারবার ঢেকুর উঠে তাহলে কার্বোভেজ ৩০ তিন ফোঁটা করে দিনে তিনবার খেতে হবে। গ্যাস্ট্রিক আলসারের একটি কার্যকরী বায়োকেমিক কম্বিনেশন ঔষধ হলো বিসিবি ২৫। এই ঔষধটি গ্যাস, অম্বল, বদহজম, বুক জ্বালা, গ্যাস্ট্রিক আলসারের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী একটি বায়োকেমিক কম্বিনেশন ঔষধ। পাঁচটি করে বড়ি দিনে তিনবার চিবিয়ে খেয়ে হালকা গরম পানি খেতে হবে। এতে আশা করা যায়, গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০১৯

হোমিও প্রাথমিক চিকিৎসা

আমাদের চারপাশে সব সময় কোন না কোন অসুখ বিসুখ লেগেই থাকে, যেমন- কারো বাড়ির কোন সদস্যের হঠাৎ পুড়ে যাওয়া, আঘাত লাগা, কারো জ্বর হওয়া, কারো সর্দি হওয়া, কারো পেটের পীড়া হওয়া ইত্যাদি এই সমস্ত অসুখ বিসুখ থেকে রেহাই পেতে প্রত্যেকের বাড়িতেই হোমিওপ্যাথিক প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ রাখা প্রয়োজন প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ সাতটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ বাড়িতে রাখলে আমাদের জটিল কোনো সমস্যা ব্যতীত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না 

Homeopathic First Aid


সাতটি কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক ঔষধঃ

একোনাইট ৩০: একোনাইট ৩০ ঔষধ টি বাড়িতে অবশ্যই রাখা উচিত এই ঔষধটি ঠান্ডা লেগে যদি কোন রোগ হয়, যেমন- সর্দি, কাশি, জ্বর এই ধরনের রোগে চমৎকার ফলপ্রদ এই ঔষধটি আরো যে সমস্ত রোগের কার্যকরী তা হচ্ছে হঠাৎ যদি ভয় পেয়ে কোন রোগ বা হঠাৎ কোনো দুর্ঘটনায় মৃত্যু ভয় এসে যায়, ঠোঁট সাদা হয়ে যায়, চোখ বুঝতে থাকে সে ক্ষেত্রেও একোনাইট ৩০ ভালো কাজ করে হঠাৎ মাথা ব্যাথা, হাত-পা ব্যথা করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী দুই ঘন্টা পর পর দুই ফোঁটা করে সেবন করতে হবে

আর্নিকা ৩০: আমাদের বাড়িতে দ্বিতীয় যে ওষুধটি রাখা দরকার তা হলো আর্নিকা ৩০ কোন রকমভাবে কেউ আঘাত পেলে, পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলে, আমাদের বাচ্চারা হঠাৎ পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলে সে ক্ষেত্রে আর্নিকা ৩০ ভালো কাজ করে অনেক সময় চোট লাগার ফলে রক্ত জমে যায়, কালশিরা পড়ে যায় সে ক্ষেত্রে বড়রা ফোঁটা, শিশুরা এক ফোঁটা জিভে দিয়ে সেবন করলে ব্যথা সেরে যায় এছাড়া কারো মাজা ব্যথা, কারো হাঁটুর ব্যথায় আর্নিকা ৩০ দুই ফোঁটা করে দিনে চারবার খেলে ব্যথা সেরে যাবে চুল পড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত ভালো কাজ করে যে কোন রকম চোট বা আঘাত লাগলে আর্নিকা ৩০ সেবনে ভালো ফল পাওয়া যায়

নাক্স ভমিকা ৩০:  এই ঔষধটি পেটের গন্ডগোল এর ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী সামগ্রিক ভাবে বলতে গেলে নাক্স ভমিকা ৩০ আমাদের পেটের যাবতীয় গন্ডগোল, যেমন-গ্যাস, বদহজম, বুক জ্বালা, মুখ টক হয়ে যাওয়া, মুখ তিতা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী এর সাথে সাথে যদি কারো ঘুম কম হয় তাহলে নাক্স ভমিকা ৩০ দিনে তিনবার দুই ফোঁটা করে সেবন করলে ঘুম ঠিকঠাক মত হবে আবার অনিদ্রার কারণে বা রাত জাগার কারণে বা অত্যধিক পরিশ্রমের কারনে যদি কোন রোগ হয় তাহলে নাক্স ভমিকা ৩০ দিনে চারবার দুই ফোঁটা করে নিলে ভালো কাজ করে পেটের গন্ডগোল এর কারনে যদি বমি হয় সে ক্ষেত্রে এটি চমৎকার কাজ করে তাছাড়া বাড়িতে যদি অন্য কোন ঔষধ না থাকে যদি নাক্স ভমিকা ৩০ থাকে তাহলে সর্দি, কাশি, জ্বর বা অন্য যে কোন রোগের ক্ষেত্রে দুই ফোঁটা করে দুই ঘন্টা পর পর সেবন করলে আরাম হয়ে যেতে পারে

ব্রায়োনিয়া ৩০: ৪র্থত যে ঔষধটি আমাদের বাড়িতে রাখা প্রয়োজন সেটি হল ব্রায়োনিয়া ৩০ এটিকে হোমিওপ্যাথির প্যারাসিটামল বলা হয় যে কোন জ্বরের ক্ষেত্রে বা মাথা ব্যথা, সর্দি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে এছাড়া ব্রায়োনিয়া ৩০ গ্যাস, কোষ্ঠ্য কাঠিন্যের ক্ষেত্রেও ভালো কাজ করে দুই ঘণ্টা পরপর দুই ফোঁটা করে সেবন করতে হবে

আর্সেনিক ৩০: যদি বিষাক্ত খাবার এর ফলে বা ফুড পয়জনিং এর কারণে যদি কোন রোগ হয়, বমি হয়, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হয়, পেটে জ্বালা হয় এক্ষেত্রে আর্সেনিক ৩০ দুই ঘন্টা পর পর দুই ফোঁটা করে সেবন করলে ভাল ফল পাওয়া যায় অনেক সময় দেখা যায় বিষাক্ত পানি পানের কারণে বিভিন্ন রোগ হয়, সর্দি-কাশি বা চর্মরোগ হয় এক্ষেত্রেও এটি ভালো ফলপ্রদ বিষাক্ত খাবার খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হলেও ঔষধটি ভালো কাজ করে

 রাসটক্স ৩০: যদি বর্ষাকালীন কোন রোগ হয় বা পানিতে ভেজার কারণে যদি কোন রোগ হয় তাহলে রাসটক্স ৩০ দুই ফোঁটা করে জিভে দিয়ে দিনে চার বার সেবন করলে ভালো কাজ করে গা হাত পা ব্যথা করলে, জ্বর, মাথা ব্যথা, সর্দি, কাশি এসব ক্ষেত্রেও রাসটক্স ৩০ খুবই কার্যকরী এছাড়াও অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে যদি গা হাত পা ব্যথা বা মাংসপেশীর ব্যাথা হয়, মাজা ব্যথা বা হাঁটুর ব্যথা ইত্যাদিতেও রাসটক্স ৩০ অত্যন্ত ভালো ফলপ্রদ


ক্যালেন্ডুলা মাদার টিংচার: চোট লাগার কারণে বা কেটে গেলে যদি রক্তপাত হয় তাহলে ক্যালেন্ডুলা মাদার টিংচার অল্প জলের সাথে মিশিয়ে তুলো দিয়ে কাটা স্থানে লাগালে ঘা শুকিয়ে যাবে এটি যদি ফোঁড়ার ঘায়ে লাগানো হয় তাহলে ভালো ফল পাওয়া যায়