সোমবার, ৮ জুন, ২০২০

করোনা ভাইরাস মহামারি প্রেক্ষাপট : হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ও করণীয়।



ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম
বিএইচএমএস (ঢাবি), এমপিএইচ, পিজিডি, পিজি(হোম)
বিশ্বে মহামারি আকারে দেখা দেয়া করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধ, করণীয় এবং এতদসংক্রান্ত পূর্বাপর লক্ষণসমূহের (উপসর্গ) রোগিদের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিষয়ে সময়ের প্রয়োজনে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য, পরামর্শ ইতিকথা তুলে ধরার চেষ্টা করছি
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এখন একটি আতংকের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগিদের চিকিৎসায় বিশেষ কোন ঔষধ বা প্রতিষেধক আজ অবধি আবিষ্কৃত হয় নাই বিধায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( WHO) এটাকে Emergency Health Issue বা মহামারি হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। বাংলাদেশ সরকারও করোনা ভাইরাস মহামারি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে যথাপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত কার্যক্রমের সার্বক্ষনিক মনিটরিং করছেন। মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সরকারের সকল বিভাগের উর্দ্ধোতন কর্মকর্তাবৃন্দ, চিকিৎসকবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট সকল কর্মচারিগণ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করছেন


ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সুনিদিষ্ট কোন ঔষধ না থাকায় রোগিকে আইসোলেশনে বা কোয়ারেন্টাইনে রেখে লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। নভেল করোনা ভাইরাস এর ভয়াবহতা মোকাবেলায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মোতাবেক প্রতিরোধ কার্যক্রম, স্বাস্থ্য পরামর্শ, স্বাস্থ্য বিধি-বিধান, নিয়মাবলি পালন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো কার্যকর হিসাবে প্রতিমান
১। মাস্ক পড়া, ঘনঘন সাবান দিয়ে হাত পরিস্কার করা।
২। হাত দিয়ে নাক, চোখ মুখ স্পর্শ না করা।
৩। নিয়মিত শরীরে তাপমাত্রা পরিমাপ করা।
৪। কুসুম গরম পানি পান করা গড়গড়া করা।
৫। জ্বর, সর্দি, হাঁচি,কাশি, গলাব্যথা শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা।
৬। জনসমাগম এড়িয়ে চলা সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা।
৭। স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকার স্বাস্থ্য বিভাগের নিদের্শনা অনুসরণ করা।
০৮। স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা
তাছাড়াও করোনা ভাইরাসসহ অন্যান্য ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ামুক্ত জীবন-যাপনের লক্ষে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহের প্রতি গুরুত্ব দেয়া অতীব জরুরি। যা আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে ( Immune System) শক্তিশালী করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম
১। নিয়মিত কম বেশি ব্যায়াম করা এবং কমপক্ষে ৩০মিনিট হাটা চলা করা।
২। প্রয়োজনীয় বিশ্রাম গ্রহণ করা
৩। ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।
৪। বেশি বেশি ভিটামিন সি জিংক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।
৫। কার্বহাইড্রেট ফ্যাট জাতীয় খাবার পরিহার করা।
৬। প্ল্যান্ট এনিম্যাল প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।
৭। মুগ মুশুরির ডাল মেশানো খিচুরী খাওয়া যেতে পারে
করোনা ভাইরাস বা মহামারি রোগ প্রতিরোধ এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা :
বিশ্ব মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভূমিকা গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত করার লক্ষে প্রচলতি চিকিৎসা পদ্ধতির পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃতি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির সমন্বয় প্রয়োজন। ডা. হ্যানিম্যান কর্তৃক ১৭৯০ সালে জার্মানিতে হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা আবিষ্কার হলেও আমাদের এই উপমহাদেশের হোমিওপ্যাথির আগমন ঘটে ১৮৩৯ সালে ডা. জন মার্টিন হোনিগবার্গারের আগমনে। তৎকালিন ভারত বর্ষের পাঞ্জাবে এবং পরবর্তিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহর হয়ে আমাদের এই অঞ্চলে হোমিপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির বিস্তৃতি ঘটে। আজ হোমিওপ্যাথি বিশ্ব মানুষের নিদানকালের বন্ধু প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জটিল মহামারি রোগে এই চিকিৎসা পদ্ধতি দ্বারা বৃহত্তম জনগোষ্ঠি স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে আসছে। নিরাপদ, সুলভ, স্বল্পমূল্য, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন গ্রহণযোগ্য কার্যকারিতার কারণে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা উন্নত উন্নয়নশীল দেশসহ বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে বিস্তার লাভ করেছে
হোমিওপ্যাথি একটি লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। ডাঃ হ্যানম্যিান, চকিৎিসা বজ্ঞিানরে জনক হপিোক্রটেসিরে ‘ Like Cures Like’ এবং ‘ a minimum number of medicine’ ত্বত্তরে সাথে minimum dose, individualized medicine, concept of vital force এবং doctrine of dynamization of medicinal substance ত্বত্ত যুক্ত করে ১৭৯৬ সালে হোমিওপ্যাথিকে সবার সামনে তুলে ধরেন। হোমিওপ্যাথিতে রোগির সার্বদৈহিক লক্ষণ বিশ্লেষণ করে ঔষধ নির্বাচন করা হয়ে থাকে। একজন রোগির ব্যক্তি স্বাতস্ত্র পরিপূর্ণ রোগ বৃওান্ত গ্রহণ করে ঔষধ নির্বাচন করা হয়ে থাকে। কোন একটি মহামারি রোগের লক্ষণগুলো এলাকা বা অঞ্চলে আক্রান্ত রোগিদের মধ্যে কম বেশি একই রকম হয় পরির্পূণ রোগবৃত্তান্ত গ্রহণের পর যদি বশে কয়কেজন রোগরি ক্ষেত্রে একই ঔষধ নর্বিাচতি হয় তাহলে ঔষধ উক্ত ভৌগলকি এলাকার জন্য নির্ধারিত ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে আর নির্ধারিত ঔষধটিকে Genus Epidemicus হিসেবে অভহিতি করা হয় মহামারি সংক্রমনের কয়েকদিনের মধ্যে এই ঔষধটি নর্বিাচন করা হয়। যা বিগত দুইশত বছরের অধিক সময় ধরে প্রমাণিত। চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ১৭৯০ সালে হোমিওপ্যাথি আবিষ্কারের পর থেকে এই চিকিৎসা ধারায় অনেক জটিল মহামারি  রোগের চিকিৎসার সাফল্য অর্জনের ইতিহাস আছে। মহামারির রোগের প্রতিষেধক হিসাবে জেনাস ইপিডেমিকাস ( Genus Epidemicus) হোমিওপ্যাথি প্রিভেনটিভ মেডিসিন। হোমওিপ্যাথকি ওষুধ বভিন্নি সময়ে টাইফয়েড, কলেরা, ইয়েলো ফিভার, স্কারলটে ফভিার, ছোট পক্স, ডিপথেরিয়া, স্প্যানিশ ফ্লু, মেনিনজাইটসি এবং পোলিও সহ বেশ কয়কেটি মহামারীর চিকিৎসায় সফলতা দেখায় যা উনশি-শতকে হোমওিপ্যাথিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে বিশেষ জনপ্রিয় করে তোলে ডা. হ্যানিম্যানের অর্গানন অব মেডিসিন বইয়ের ষষ্ঠ সংস্করণের ১০০ থেকে ১০৪ নং সূত্রে ইপিডেমিক ডিজিজ ( Epidemic Diseases )সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। মহামারি রোগে প্রচলিত চিকিৎসা ধারার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার সফলতা নিয়ে কিছু তথ্য ঘটনা উপস্থাপন করছি :

১। ১৭৯৯ ১৮০১ সালে মহামারি আকারে দেখা দেয়া স্কারলেট ফিভারে হোমিওপ্যাথি ঔষধ বেলাডোনা-৩০ প্রয়োগ করে
ডা. হ্যানিম্যান অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থার চেয়ে রোগির মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।
২। ১৮১৩ সালে জার্মানির টাইফাস ফিভার মহামারিতে প্রচলিত চিকিৎসা ধারায় মৃত্যুর হার ছিল যেখানে ৩০% সেখানে
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল %
৩। ১৮৩১ সালে অস্ট্রিয়ার কলেরা মহামারিতে প্রচলিত চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ৪০% থাকলেও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর
হার ছিল মাত্র ১০%
৪। ১৮৪৯ সালের যুক্তরাষ্ট্রের সিনসিনাটির কলেরা মহামারিতে হোমিওপ্যাথির সাফল্য ৯৭% প্রচলিত চিকিৎসায় সাফল্য ছিল
মাত্র ৪০% থেকে ৫০%
৫। ১৮৫৪ সালে লন্ডনের কলেরা মহামারিতে প্রচলিত চিকিৎসায় মুত্যুর হার ছিল ৫৯.% আর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর
হার ছিল মাত্র %
৬। ১৮৫৫ সালে আফ্রিকার রিও- কলেরা মহামারিতে প্রচলিত চিকিৎসায় মুত্যুর হার ছিল ৪০% থেকে ৬০% আর
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল মাত্র %
৭। ১৮৬২ থেকে ১৮৬৪ সালের নিউইয়র্ক ডিফথেরিয়ার সংক্রমণে প্রচলিত চিকিৎসায় মুত্যুর হার ছিল ৮৩.% আর
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল মাত্র ১৬.%
৮। ১৮৭৮ সালে আমেরিকার ইউলো ফিবার মহামারিতে প্রচলিত চিকিৎসায় মুত্যুর হার ছিল ১৫.% আর হোমিওপ্যাথি
চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল মাত্র %
৯। ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারিতে প্রচলিত চিকিৎসায় মুত্যুর হার ছিল ২৮.% আর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর
হার ছিল মাত্র .০৫%
তাছাড়াও ১৯৭৪ ব্রাজিলের ম্যানিনজাটিস, ১৯৭১ সালের ভারতের জাপানিজ এনকেফালাইটিস, ২০০৭ সালে কিউবার ল্যাপটোস্পাইরোসিস এবং ২০০৯ সালে ভারতে সোয়ান ফ্লু ইত্যাদি রোগ ইপিডিমিক ( Epidemic ) আকারে দেখা দেয়া স্বাস্থ্য ঝুকিতে হোমিওপ্যাথির সফলতা ছিল শীর্ষে মৃত্যুর হার ছিল না বললেই চলে। স্মরণকালের ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়া রোগের প্রার্দুভাবেও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার সাফল্য রয়েছে। ১৯৯৫ সালে কিউবাতে করোটোকঞ্জাকটিভাইটিস রোগে এবং ২০০৭ সালে ভারতের কেরালাতে চিকুনগুনিয়া রোগে হোমিওপ্যাথি ওষুধ প্রয়োগ করে সফলতা পাওয়া যায়
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমে হোমিওপ্যাথির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের অধীনে পরিচালিত ২০১৩ সালের একটি বেসরকারি জরিপে দেখা যে, বাংলাদেশের মোট জনগণের মধ্যে ২৯.% জনগন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে থাকে।বর্তমান পরিস্থিতিতে COVID-19 (করোনা ভাইরাস) চিকিৎসায় মূল চিকিৎসা ধারা লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা সেবা প্রদানে চিকিৎসকদেরকে পরার্মশ দিচ্ছি। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থা যার মৌলকি ভিত্তিই লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা, বৈশ্বিক এই দূর্যোগ মোকাবেলায় গুরুত্বর্পূন ভূমিকা রাখতে পারে।COVID-19 (করোনা ভাইরাস) সংক্রমণ বা এতদসংক্রান্ত লক্ষণের রোগীদের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিক ঔষধ বিবেচনা করা যেতে পারে

চীনের উহান প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভয়াবহতা মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন দেশ জরুরি অবস্থা ঘোষণাসহ লকডাউন, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, হোম কোয়ারেন্টাইন স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার ব্যবস্থা উদ্যোগ নিয়েছেন। সার্বিক অবস্থায় চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের দিকে নজর দেয়া হচ্ছে বেশি। আক্রান্ত রোগির লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা প্রাতিষ্ঠাানিক আইসোলেশনের ব্যবস্থ্যা নেয়া হচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সরকারের বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য গঠিত আয়ুষ ( AYUSH ) মন্ত্রণালয় গত ২৮ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন হোমিওপ্যাথি ( CCRH ) এর ৬৪তম সায়েন্টিফিক এডভাইজারি বোর্ড সভায় ‘‘প্রিভেনশন অব কোরোনা ভাইরাস ইনফেকশন থ্রো হোমিওপ্যাথি’’ শীর্ষক আলোচনায় করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসাবে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ আর্সেনিক এ্যালব-৩০ পর পর ৩দিন খালি পেটে সুক্ষ্ম মাত্রায় সেবনের পরামর্শ দিয়েছেন। যা অনুসরণ করে পরবর্তীতে ভারত সরকারের রেল বিভাগ হতে তাঁদের কর্মচারিদের নির্ধারিত হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল থেকে হোমিওপ্যাথিক ঔষুধ আর্সেনিক এ্যালব-৩০ সেবনের পরামর্শ দিয়ে গত ২৮ মার্চ ২০২০ তারিখে পত্র জারি করা হয়
জেনাস এপিডেমিকাস (Genus Epidemicus ) প্রিভেন্টিভ হোমিওপ্যাথিক ঔষধটি নির্বাচনের সময় আক্রান্ত রোগির লক্ষণ সমষ্টির উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহজনক রোগির লক্ষণগুলো হলো জ্বরসহ শারীরিক দূর্বলতা, শরীর মেজ মেজ বা ব্যথা করা, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, সর্দি, কার্শি শ্বাসকষ্ঠ অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় নিউমোনিয়া, লিউকোপেনিয়া, লিম্ফোপেনিয়া, Severe Acute Respiratory Syndrome (SARS), কিডনি ফেলউর হয়ে রোগির মৃত্যু হতে পারে। ভারতের আয়ুষ মন্ত্রণালয়ের এডভাইজারি বোর্ড করোনা ভাইরাসের প্রিভেন্টিভ হোমিওপ্যাথি ঔষধ হিসাবে আর্সেনিক এ্যালব-৩০ প্রয়োগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা সহজপাচ্য খাবার গ্রহণের গুরুত্ব দিয়েছেন
ভৌগলিক আবহাওয়া জনিত পার্থক্যকের কারণে চীন অন্যান্য দেশ হতে ভারত এবং বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগির লক্ষণ কিছুটা পার্থক্য থাকতে পারে। যেহেতু, হোমিওপ্যাথি ঔষধ সার্বদৈহিক লক্ষণভিত্তিক কাজ করে সেহেতু, ঔষধ নির্বাচনের সময় লক্ষণ বিশ্লেষণে চিকিৎসকে সতর্ক থাকতে হবে। ভাইরাল ইনফেকশনে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে শতাধিক ঔষধের মধ্য থেকে একজন চিকিৎসককে রোগির লক্ষণ সাদৃশ্য নিবাচিত ঔষধটি খুঁজে বের করতে হয়
কিছু ঔষধ শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে ( Immune System) সক্রিয় করে ভাইরাস আক্রমণ হতে রক্ষা করতে পারে। যা রোগের মহামারি আকারে বিস্তার রোধে সক্ষম। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগি এদতসংক্রান্ত অন্যান্য রোগির লক্ষণসমূহ বিশ্লেষণ করে প্রচলিত হোমিওপ্যাথিক ঔষধসমুহের মধ্য থেকে বেশি ব্যবহ্নত হতে পারে এমন কয়েকটি ঔষধের নাম এখানে উল্লেখ করছি যেমন-একোনাইট, আর্সেনিক এ্যালব, রাসটক্স, ব্রায়োনিয়া, বেলডোনা, জাস্টিসিয়া, ইনফ্লুয়েনজিয়াম, ইউপেটোরিয়াম, জিলসিমিয়াম, এন্টিম টার্ট, নেট্রাম মিউর,পালসেটিলা ইত্যাদি। নির্ভুল ঔষধ নির্বাচনে চিকিৎসকগণ আধুনিক সফটওয়্যারভিত্তিক হোমিওপ্যাথিক রেপার্টরি ব্যবহার করতে পারেন।
করণীয়ঃ
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( WHO) কর্তৃক স্বীকৃত একটি লক্ষণভিক্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগির কোন সু-নির্বাচিত ঔষধ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি সেক্ষেত্রে প্রচলিত এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসকগণের পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিক রেজিস্টার্ড চিসিৎসকদেরকেও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ মেডিকেল সামগ্রী প্রদান করে সরকার কর্তৃক স্থাপিত অনুমোদিত হোমিওপ্যাথিক হাসপাতালসমূহে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ এতদসংক্রান্ত লক্ষণভিত্তিক রোগির চিকিৎসার দায়িত্ব প্রদান করা যেতে পারে। এই বিষয়ে প্রয়োজনে অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণের সমন্বয়ে একটি উচ্চতর এডভাইজারি বোর্ড গঠণ এবং হোমিওপ্যাথিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণপূর্বক সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে একটি ট্রিটম্যান্ট গাইড লাইন প্রস্তুত করা যেতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে, বর্তমানে দেশে রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট (বিএইচএমএস) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সংখ্যা ,৬০০ জন (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধিত) এবং ডিপ্লোমা (ডিএইচএমএস) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সংখ্যা ৩২,০০০ জন (বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড কর্তৃক নিবন্ধিত)
সর্বোপরি, সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রম নিশ্চিত করার লক্ষে সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি/নিয়ম কানুন মেনে চলাসহ ব্যক্তিস্বাতন্ত্রনির্ভর হোমওিপ্যাথকি চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে স্বল্পব্যয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুযোগ রয়েছে হোমিওপ্যাথির উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি, যুগোপযোগী উন্নত প্রশিক্ষণ, রাষ্ট্রীয়ভাবে হোমিওপ্যাথিক রিসার্চ সেন্টার স্থাপন, বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসমূহের শিক্ষক, চিকিৎসক কর্মকর্তা/কর্মচারিদের শতভাগ বেতন ভাতা প্রদান হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি আইনের চূড়ান্তকরণ এখন সময়ের দাবি
(ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম)
রেজিস্ট্রার-কাম-সেক্রেটারী
বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড

২টি মন্তব্য:

  1. এই নিবন্ধে আপনি , লিঙ্গ সংক্রমণের লক্ষণসমূহ, লিঙ্গ ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকার, লিঙ্গ ব্যথার কারণগুলি, লিঙ্গ ব্যথার চিকিত্সা पूरा पढ़े

    উত্তরমুছুন
  2. জার্মানি মেডিসিন কিভাবে পেতে পারি?

    উত্তরমুছুন